১৯৩০-এর মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি: আইএমএফ
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত শতকের যেকোনো মন্দার তুলনায় বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এমন কথাই বলেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে তিনি এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যাপক আকারের উদ্যোগ দরকার হবে বলেও জানান।
বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী গতি নিয়ে অবশ্য আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিল আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা। তবে করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব অর্থনীতিতে নজিরবিহীন বিপর্যয় তৈরি করেছে বলে সতর্ক করা হচ্ছে।
এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী বা ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার চেয়েও অধিক ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি এই সংকট মোকাবিলায় সকল প্রকার বড় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
বিশ্বের ১৯২ দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ মারা গেছেন। সংক্রমিতের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসটি প্রতিরোধের লড়াইয়ে এখন লকডাউন চলছে দেশে দেশে। ফলে থমকে গেছে কারখানা, সেবাভিত্তিক ব্যবসা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এই অবস্থায় আইএমএফের আশঙ্কা ২০২০ সালে বৈশ্বিক গড় উৎপাদন ও সেবা প্রবৃদ্ধি তলিয়ে যাবে নিম্নমুখী অবস্থানে। জর্জিয়েভা জানান, আইএমএফের ১৮০টি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে ১৭০টি দেশই তাদের মাথাপিছু আয়ের সাংঘাতিক পতন লক্ষ্য করছে।
'মাত্র কয়েক মাস আগেই ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটি ১৬০টি দেশে মাথাপিছু আয় প্রবৃদ্ধির অনুমান করেছিল', বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আগামী মঙ্গলবারের যৌথ বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার এভাবেই পরিবর্তিত অবস্থার কথা জানান জর্জিয়েভা।
প্রথমবারের মতো ওই বৈঠক ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
জর্জিয়েভা বলেন, 'সবচেয়ে ভালো অবস্থাতেও বিশ্ব অর্থনীতি আগামী বছর বৈশ্বিক মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারে বলে অনুমান করছে আইএমএফ। তবে এজন্য চলতি বছরের শেষদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পূর্ণ কমে যেতে হবে। ওই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক গতিতে ফিরে এলেই শুধু সংকট থেকে কিছুটা উত্তরণের আশা রয়েছে।'
তবে খুব বেশি আশাবাদী না হয়ে বরং বিপর্যয় মোকাবিলাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জর্জিয়েভা জানান, সংকট আরও গভীর আকার ধারণ করার ঝুঁকিই বেশি। এর প্রধান কারণ, বিদ্যমান বিনিয়োগ ও ব্যবসা- সবকিছু গ্রাস করে ফেলা করোনাভাইরাস ঘিরে গভীর অনিশ্চয়তা আইএমএফের পূর্বাভাসকে প্রভাবিত করছে।
এদিকে আইএমএফ আগামী মঙ্গলবার তাদের অতি-সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনীতির পুর্বাভাসসূচক প্রতিবেদন 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক' প্রকাশ করবে। ওই প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি এর সদস্য দেশগুলোর অর্থনীতি নিয়ে চলতি বছর এবং তার পরের বছরের জন্য খুবই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত জানুয়ারির ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে সংস্থাটি চলতি বছর গড় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে অনুমান করেছিল। ২০২১ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার পূর্বভাস দেওয়া হয় সেসময়।