'মাদার অব অল গেমস': ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার পারদ বাড়ছে
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ভূ-রাজনৈতিক বৈরিতা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) উভয় দেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড মুখোমুখি হবে ফুটবল মাঠে। এই ম্যাচে জয়ের ওপর নির্ভর করবে বিশ্বকাপের আসরে উপস্থিতি, হারলেই নিতে হবে বিদায়। সবমিলিয়ে এ আসরের সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেওয়া গ্রুপের উপযুক্ত সমাপনী ম্যাচ হতে চলেছে এটি। খবর রয়টার্সের
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ জমাট বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন উভয় টিমের কোচ। তারা বলেছেন, টুর্নামেন্টে সুস্থ প্রতিযোগিতাই লক্ষ্য। সবাইকে একসূত্রে বাঁধতে বিশ্বকাপের যে আবেদন- তার প্রতিও গুরুত্ব দেন।
কোচদের ইতিবাচক বক্তব্য কূটনৈতিক বৈরিতার বাস্তবতাকে অবশ্য লঘু করতে পারেনি তেমন। পারার কথাও নয়। ইসলামী বিপ্লবের পর ১৯৮০ সালের তেহরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ওয়াশিংটন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের হয়েছে আরও অবনতি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পর সম্পর্ক আরও বিরূপ হয়ে ওঠে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেল কাশেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করে। প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলোয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
তবু যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহল্টার বলেছেন, 'দুই দলই পরের পর্বে যেতে চায়।ম্যাচ সেকারণেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করি, উভয় দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের জন্য নয়'।
'ফুটবলের আসরে বিশ্বের নানান প্রান্তের মানুষের দেখাসাক্ষাত হয়। ক্রীড়ার জন্য সকলের ভালোবাসাই এখানে সম্পর্কের বন্ধন গড়ে। আমরা ফুটবল খেলোয়াড়, আমরা প্রতিযোগিতার জন্য এসেছি, আর সেটাই করব- এটুকুই বলতে চাই'- যোগ করেন তিনি।
এর আগে ওয়েলস এর বিরুদ্ধে ২-০ গোলে নাটকীয় জয় পায় ইরান। অন্যদিকে, শুক্রবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে গোলশূন্য সমতা পায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তাতে গ্রুপ বি'র ফাইনাল রাউন্ড হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এ গ্রুপে চার পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইনল্যান্ড। সর্বশেষ অবস্থান ওয়েলসের। তাই যুক্তরাষ্ট্র- ইরান ম্যাচে যে দল জিতবে– তারাই যেতে পারবে ১৬ দলের পরের রাউন্ডে।
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে তীব্র প্রতিযোগিতার লড়াই করে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। এবারের ম্যাচটিও হতে পারে তারই প্রতিফলন। ৯৮'র ওই ম্যাচকে বলা হয় 'মাদার অব অল গেমস'- যা ইরান জিতেছিল ২-১ গোলের ব্যবধানে।
তবে ম্যাচের আগে দেখা যায়- অভূতপূর্ব সম্প্রীতি, যখন মার্কিন প্রতিপক্ষদের শান্তির প্রতীক সাদা গোলাপ দিয়েছিলেন ইরানি খেলোয়াড়রা।
ইরানে এখন রাজনৈতিক গোলযোগ চরমে। ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির ধর্মীয় পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু ঘিরে চলছে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ।
এই আন্দোলনের সাথে সংহতি জানাতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানান ইরানি খেলোয়াড়রা। শুক্রবার কাতারের আহমেদ বিন আলি স্ট্যাডিয়ামে অবশ্য তারা নীরবে গেয়েছেন।
তবে বিশ্বকাপ মিশনের দায়িত্ব ভোলেনি টিম মেলি। তাই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-২ গোলে বিপর্যয়কর হারের পর- ওয়েলসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে আশার আলো জিইয়ে রাখে।
ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচকে যথার্থভাবেই বিশ্বকাপের 'প্রথম নকআউট গেম' বলেছেন বেরহল্টার। দ্বিতীয়ার্ধে ওয়েলসের বিরুদ্ধে দলটির আক্রমণ দেখে চিন্তার ভাঁজও পড়েছে তার কপালে। টিম মেলির হুমকিকে তিনি গুরুত্বের সাথে দেখছেন বলেও জানান।
ইরানের কোচ কোচ কার্লোস কুইরোজ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, 'আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা এবার নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র দলও চমৎকার, ওয়েলসের বিরুদ্ধে আমরা তাদের সাবলীল নৈপুণ্য দেখেছি'।
তিনি আরও বলেন, 'ইরানের ভক্ত-সমর্থকদের এই জয়টা উপহার দিতে চাই। তাই খেলার বাইরের সব প্রসঙ্গের আবর্জনা মাথা থেকে সরিয়ে রাখছি আমরা'।