বিশ্বকাপে আফ্রিকান দলগুলোর ইতিহাস ও সাফল্য
স্মরণকালের সবথেকে রোমাঞ্চকর বিশ্বকাপ উপহার দিচ্ছে কাতার। চমকের পর চমক দেখিয়ে চলেছে প্রত্যাশার বাইরের দলগুলো। থেমে নেই আফ্রিকাও। সেনেগাল এবং মরক্কো ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে নক-আউট পর্ব। আজ নক-আউটে যাওয়ার সুযোগ থাকছে ঘানা এবং ক্যামেরুনেরও। যদিও ক্যামেরুনের জন্য কাজটা ঘানার তুলনায় কঠিন, তবে কাতার যা দেখাচ্ছে, তাতে অসম্ভব বলে কিছু নেই বলেই মনে হচ্ছে।
ঘানা এবং ক্যামেরুনের দুই দলই যদি শেষ পর্যন্ত নক-আউট পর্বে পৌঁছায় সেক্ষেত্রে শেষ ১৬ তে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করবে ৪ দল, যেকোনো একদল উঠলেও ৩ দল, দুই দলের কেউই না উঠলেও সেনেগাল এবং মরক্কোর কল্যাণে দুইটি দল থাকছে আফ্রিকা থেকে।
বিশ্বকাপের শুরুতেই কাতারে আফ্রিকার আশার বাতিঘর হিসেবে সেনেগালকেই দেখছিল সবাই, সেই তালিকায় মরক্কোও যুক্ত হয়েছে। যদিও মরক্কো আফ্রিকার থেকে আরবেরই বেশি। সেই হিসেবে সেনেগালকে নিয়েই যতো গর্ব আফ্রিকানদের। ঘানা বা ক্যামেরুন সেই গর্বের অংশীদার হতে পারবে কিনা তা জানতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।
কাতার বিশ্বকাপের শেষ ১৬'র খেলা শুরু হওয়ার আগে বিশ্বকাপে আফ্রিকান কয়েকটি দলের ইতিহাস সম্পর্কে জানা জরুরি। সেই ইতিহাস খোঁজার চেষ্টাই করা হয়েছে এই লেখায়।
সেনেগাল
ফিফা র্যাংকিং তো বটেই, শক্তি-সামর্থ্যেও আফ্রিকার সবথেকে বড় দল এখন সেনেগাল। দলের সবথেকে বড় অস্ত্র সাদিও মানেকে ছাড়াই নক-আউট পর্বে উঠেছে তেরাঙ্গার সিংহরা। আফ্রিকান নেশন্স কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা শেষ ১৬ তে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের।
বিশ্বকাপে এটি সেনেগালের ২য় বারের মতো নক-আউটে উঠা। এর আগে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই শেষ ১৬'র বাধা পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেই উঠে গিয়েছিল তারা। ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগালের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। সেনেগালের সোনালি প্রজন্মের হাত ধরে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছায় তারা। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকেই নক-আউট পর্বে উঠে সেনেগাল, বলা বাহুল্য যেটি কোনো আফ্রিকান দলের জন্য প্রথম নজির।
গ্রুপে পর্বে সেনেগাল হারায় আগের বারের চ্যাম্পিয়ন এবং দুই বছর আগেই ইউরো চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে সেনেগাল বিদায় নেয় 'গোল্ডেন গোলে' হেরে। তবে এরপর আরো ভালো করার বদলে পরের তিন বিশ্বকাপে সুযোগই পায়নি তারা।
কাকতালীয়ভাবে এবারও বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেনেগালের সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন আলিউ সিসে, কাতারে যিনি তাদের কোচ!
ঘানা
বিশ্বকাপে ঘানার পথচলা বেশিদিনের নয়। ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুযোগ পায় তারা, প্রথমবার খেলেই নক-আউট পর্বেও উঠেছিল তারা। ২০১০ বিশ্বকাপের ঘানা তো ফুটবল পুরাকীর্তিরই অংশ।
আফ্রিকা মহাদেশেই হওয়া প্রথম বিশ্বকাপে আফ্রিকা থেকে দল ছিলো ৬টি। শুধুমাত্র ঘানাই গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার হতে পেরেছিল। ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই নক-আউট পর্বে উঠা আর সদ্যই ফিফা অনূর্ধব-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা ঘানা কোয়ার্টার-ফাইনালে উরুগুয়েকেও নড়িয়ে দিয়ে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা পরিস্কার করেই ফেলেছিল প্রায়, বাঁধ সাধে লুইস সুয়ারেজের 'হ্যান্ডবল'! যেই হ্যান্ডবলের জন্য আজও সুয়ারেজকে ক্ষমা করতে পারেনি ঘানা।
ক্যামেরুন
১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে ক্যামেরুন। যেটি টপকাতে পারেনি আর কোনো আফ্রিকান দলই। ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগাল আর ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানাও কোয়ার্টার-ফাইনালেই বিদায় নেয়। এছাড়া আর বলার মতোন কোনো অর্জন বিশ্বকাপে নেই আফ্রিকার সিংহদের।
১৯৯০ বিশ্বকাপে রজার মিলা দেখিয়েছিলেন তার জাদু। প্রথম কোনো আফ্রিকান দল হিসেবে ক্যামেরুন সেবারই ৩টি ম্যাচ জিতে। যার মধ্যে ছিলো আগের বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারানোও! রোমানিয়া আর কলম্বিয়ার বিপক্ষে বাকি দুইটি ম্যাচ জেতে ক্যামেরুন।
ওই টুর্নামেন্টে ক্যামেরুনের সাফল্যের পর গোটা আফ্রিকাজুড়েই ফুটবল ঝড় উঠে। এমনকি ২০০০ সালের মধ্যে কোনো আফ্রিকান দল বিশ্বকাপ জিতবে, পেলের করা এমন ভবিষ্যতবাণী সত্যি হওয়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেন আফ্রিকান ফুটবলপ্রেমিরা। তবে সেটি ঘটার কাছাকাছিও যেতে পারেনি কেউ, জেতা তো দূরেই থাক।
মরক্কো
ভৌগোলিক দিক থেকে আফ্রিকার দেশ হলেও মরক্কো নিজেদের আরব দেশ বলে দাবি করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু যেহেতু মহাদেশীয় হিসেবে তারা আফ্রিকার, তাই তাদের সাফল্যে আফ্রিকানরাও খুশী হবেই।
কাতার বিশ্বকাপে নক-আউটে উঠে ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছে মরক্কোর। এর আগে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শেষ ১৬ তে উঠেছিল আটলাসের সিংহরা। শেষ ১৬ তে স্পেনকে হারিয়ে সেটি ছাড়িয়ে গেলে তা মরক্কোর ফুটবল ইতিহাসের সেরা সাফল্য হিসেবেই লেখা হবে।
কাতারে আফ্রিকা থেকে অংশ নেওয়া আরেক দল তিউনিশিয়ার বরাবরের মতোই বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। এছাড়া এবার সুযোগ না পাওয়াদের মধ্যে নাইজেরিয়া দুইবার উঠেছে নক-আউট পর্বে, মিশর এবং আলজেরিয়া একবার করে স্বাদ পেয়েছে নক-আউটের।
এর বাইরে বিশ্বকাপে বলার মতো অর্জন অন্য কোনো আফ্রিকান দলের নেই।