পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব হ্রাসে ট্যাংকার জাহাজের ‘ছায়া বহর’ গড়ে তুলেছে রাশিয়া
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর- রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। এসব বিধিনিষেধের প্রভাব এড়িয়ে তেল বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে ১০০টি পুরোনো তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজের বহর গড়ে তুলেছে রাশিয়া। বিষয়টি প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) জানিয়েছেন জাহাজ শিল্পের ব্রোকার ও বিশ্লেষকরা।
শিপিং ব্রোকার– ব্রেমার সংস্থার প্রাক্কলন, মস্কোর নিজস্ব বহরে ১০০টির বেশি জাহাজ রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে তেল-রপ্তানি বিদেশি ট্যাংকার জাহাজের ওপরই বেশি নির্ভরশীলতা ছিল রাশিয়ার। কিন্তু, ইইউ ও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসার ভয়ে অনেক কোম্পানিই রাশিয়ার তেলবহন করতে চাইছে না। এই বাধাটি এড়াতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাহাজগুলি কিনেছে মস্কো।
জ্বালানি পরামর্শক রিস্টাড এফটি'কে জানায়, চলটি বছর ক্রয় এবং ইরান ও ভেনিজুয়েলায় চলাচলকারী জাহাজ যুক্ত করার মাধ্যমে ১০৩টি ট্যাংকার ের বহর গড়েছে রাশিয়া। ইরান ও ভেনিজুয়েলাও রয়েছে পশ্চিমাদের তেল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার অধীনে। তাদেরকে এতদিন ভাড়ায় ট্যাংকার জাহাজ দিত মস্কো।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নিজস্ব ট্যাংকার বহর গড়ে তোলার ব্যাপারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয় ক্রেমলিন। গোপনে গড়ে তোলায় একে 'ছায়া বহর' নাম দিয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যম।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে– দেশটি থেকে সমুদ্রপথে তেল আমদানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা, গত সোমবার থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। এছাড়া, রাশিয়ার তেলে সর্বোচ্চ ৬০ ডলার মূল্যসীমা আরোপের পক্ষেও গত শুক্রবার সম্মতি দিয়েছে ইউরোপীয় ব্লকটি। এই উদ্যোগ জি-৭ এর নিষেধাজ্ঞারই বর্ধিত অংশ।
জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়ার 'ছায়া বহর' এসব প্রচেষ্টার প্রভাবকে প্রশমিত করবে, তবে পুরোপুরি দূর করতে পারবে না।
জাহাজে পণ্য পরিবহনে নানান দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। এতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের ভার নেয় বীমাকারী সংস্থা। লন্ডনের লয়ডস এ ধরনের একটি বড় বীমা সেবাদাতা। কিন্তু, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল বহনকারী জাহাজকে বিমা সেবা দিতে পারবে না তারা। ইইউ এবং জি-৭ এভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে- যাতে বিমা সেবার অভাবে বৈশ্বিক ট্যাংকার বহরের সেবা বঞ্চিত হয় মস্কো। তবে মূল্যসীমা মেনে নিলে যেকোনো গন্তব্যের জন্য রাশিয়ান তেল বহনে তারা বিমা সুবিধা পাবে।
তবে রাশিয়া অনেক আগেই জানিয়েছে, মূল্যসীমাকে সমর্থনকারী কোনো দেশের সাথে জ্বালানি বাণিজ্য করবে না। এর অর্থ– পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তেল রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে মস্কো।
বিকল্প হিসেবে, ভারত, চীন ও তুরস্কের মতো দেশে সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিতে পারে, যাতে ওই দেশগুলো তা আবার পুনঃরপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। তাছাড়া, কম দামে তেল কেনার সুবিধাও এরমধ্যেই পাচ্ছে তারা। ইউরোপ যখন রাশিয়ার তেল আমদানি কমায়– তার মধ্যেই রুশ তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে তুরস্ক।
ব্রেমারের ট্যাংকার রিসার্চ শাখার প্রধান অনুপ সিং বলেন, 'জাহাজের মালিকানা রেজিস্ট্রির হিসাবে নজর দিলে সেখানে অনেক নতুন ও বেনামি ক্রেতাকে দেখা যাবে, এভাবে রাশিয়ার ট্যাংকার ক্রয়কে ট্র্যাক করা সম্ভব'।
তিনি বলেন, "এসব ক্রেতার ব্যাপারে আমাদের মতো দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ব্রোকাররা তেমন কিছুই জানে না। তবে আমরা নিশ্চিত, এভাবে কেনা বেশিরভাগ জাহাজেরই চূড়ান্ত ঠিকানা হয়েছে রাশিয়া।"