খেলাধুলায় প্রযুক্তির বিতর্কিত ব্যবহার
প্রযুক্তি খেলাধুলার একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হয়ে উঠেছে। ক্রীড়াবিদরা প্রায়ই বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কৌশল নিখুঁত করার চেষ্টা করেন। খেলাধুলায় ব্যবহৃত গিয়ার এবং সরঞ্জামগুলিকে আরও নিখুঁত করার জন্য সবসময়েই একে রিইঞ্জিনিয়ার করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
বিতর্ক তৈরি করা এমনই কিছু প্রযুক্তির ব্যবহারের উদাহরণ হলো:
বেইজিং অলিম্পিকে গতি বাড়ানো স্যুইমস্যুট
বেইজিং অলিম্পিকের বেশিরভাগ সাঁতারু স্পিডো এলজেডআর সুইমস্যুট ব্যবহার করেছিলেন, যা একজন সাঁতারুর গতি বাড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পুরো শরীরকে ঢেকে রাখা এই সুইমস্যুট শরীরের সংকোচন এবং হাইড্রোডাইনামিক্স অপ্টিমাইজ করতে সক্ষম। স্পিডো দাবি করেছে তাদের স্যুটটি একটি সাধারণ স্যুটের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কম পানি প্রতিরোধ করে। ফলে এর গতি প্রায় চার শতাংশ বেড়ে যায়। এটি এমন এক সুবিধা দেয় যে এই স্যুট ছাড়া সাঁতারুদের জেতার সুযোগও ছিল না। বেইজিং অলিম্পিকে ২৫টি বিশ্ব রেকর্ডের মধ্যে ২৩টিই ভেঙে যাওয়ার কারণ ছিল এই বিশেষ স্যুইমস্যুট। যদিও পরবর্তীতে সাঁতারের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা FINA ২০১০ সালে এই স্যুইমস্যুটকে নিষিদ্ধ করে, ২০০৮ অলিম্পিকের ফলাফল আর পরিবর্তন করা হয়নি।
কৃত্রিম পা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামা অস্কার পিস্টোরিয়াস
দুই পাই কেটে ফেলা স্প্রিন্টার অস্কার পিস্টোরিয়াস অলিম্পিকে সম্পূর্ণ সুস্থ স্প্রিন্টারদের বিরুদ্ধে দৌড়াতে চেয়েছিলেন, একইসাথে বেইজিংয়ে প্যারাঅলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তার দুই কৃত্রিম পায়েই ESR প্রযুক্তি রয়েছে ছিল যা অনেকটা স্প্রিঙয়ের মতো কাজ করে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার অ্যাথলেটিক ফেডারেশন বা আইএএএফ (বর্তমান ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স) দাবি করেছিল যে, প্রযুক্তিটি পিস্টোরিয়াসকে অন্যান্য স্বাভাবিক দৌড়বিদদের তুলনায় অন্যায্য সুবিধা দেবে। কৃত্রিম পাগুলোর ওজন কম হওয়ার কারণে তিনি সুবিধা পাবেন এবং এ কারণে অন্যান্য প্রতিযোগীদের সাথে একই গতি বজায় রাখার জন্য তার ২৫ শতাংশ কম শক্তি প্রয়োজন হবে। কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (সিএএস) অবশ্য এই অভিযোগ আমলে নেয়নি। তারা আইএএএফ-এর সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং পিক্টোরিয়াসকে মূল ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দেয়।
নাইকি ভ্যাপারফ্লাই স্নিকার্স
কেনিয়ার অ্যাথলেট এলিউড কিপচোগে ২০১৯ সালের শেষদিকে দুই ঘণ্টারও কম সময়ে একটি ম্যারাথন শেষ করেছিলেন, যা নাড়ীয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। ভিয়েনাতে এলিউড কিপচোগে এবং শিকাগোতে ব্রিগিড কোসগেই-এর করা বিশ্ব রেকর্ডগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কীভাবে জুতায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি অ্যাথলেটদের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। একই দেশের এবং একইসাথে কাজ করা ছাড়াও এই দুইরেকর্ড তৈরি করা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আরেকটি জিনিস মিল ছিল: তারা দুজনেই তাদের রেকর্ড ভেঙেছেন নতুন নাইকি ভ্যাপারফ্লাই ৪% স্নিকারের প্রোটোটাইপ পরে। নাইকির দাবি অনুযায়ী, দৌড়বিদদের শক্তির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এই জুতা, যার ফলে তাদের পারফরম্যান্সও ভালো হয়। ফলে, যারা এই স্নিকার পরেন না তাদের তুলনায় এই স্নিকার পড়া অ্যাথলেটরা এগিয়ে যান।
পোলারা ডি-স্কিলিং গলফ বল
অনেক গল্ফ বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকদের মতে, পোলারা গলফ বল প্রযুক্তিগত উন্নতির এমন একটি উদাহরণ যেটি খেলাকে 'খুব সহজ' করে তোলে এবং খেলাটি হয়ে যায় কম চ্যালেঞ্জিং। যেসব কম দক্ষ খেলোয়াড়রা বেশি ভুল করে থাকেন তাদের জন্য এই বল অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। তবে অভিজ্ঞ গলফারদের জন্য এটি তেমন কাজে লাগেনি, কারণ তারা ইতিমধ্যেই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বলকে যেকোনো দিকে পাঠাতে পারদর্শী। এই পোলারা বল সবার জন্য গলফ খেলা সহজ করে দিয়েছে। এই বলের অনন্য নকশার কারণে এটি সোজা হয়ে দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারে। তবে এই সুবিধার জন্যই শেষমেশ, বলটিকে পেশাদার গলফে নিষিদ্ধ করা হয়।
টেনিসের আম্পায়ারদের অপ্রয়োজনীয় করে তোলা হক আই
হক আই প্রযুক্তি আম্পায়ার এবং লাইন বিচারকদের পুতুলে পরিণত করেছে, যাদের দায়িত্ব ছিল স্কোরটি সঠিকভাবে আপডেট করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা এবং যেকোনো প্রশ্নবিদ্ধ লাইনের কল পর্যালোচনা করার জন্য হক আইকে অনুরোধ করা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাবের আগে, টেনিসকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য মানব বিচারকের ওপরই নির্ভর করতে হতো। তবে এখন মনে হচ্ছে, খেলোয়াড়েরা কোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কররার সময় যে কোনো ধরনের মানবিক মিথস্ক্রিয়া দূর করতে চাইছে টেনিস কর্তৃপক্ষ।