উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে
উচ্চ রক্তচাপকে অনেকেই খুব হালকাভাবে নিলেও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বিবেচনায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রতি তিন জনের একজন ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যায় ভোগেন। আর তাই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে নানা ধরণের ওষুধ সেবন করা হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে বাজারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বেশিরভাগ ওষুধ প্রাকৃতিক না হওয়ার কারণে এর কিছু নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। আর তাই একদিকে নিজের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অন্যদিকে শরীরকে নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখতে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে রসুন হতে পারে উত্তম বিকল্প।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বহু আগে থেকেই খাদ্যদ্রব্য হিসেবে রসুনের ব্যবহার করা হয়। খুবই অল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপকে আদর্শ মাত্রায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রসুনের কার্যকরী ভূমিকার কথা বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে। আরসিটি রিসার্চের মতে, কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রসুন শরীরের সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপকে যথাক্রমে ৬.৭ ও ৪.৮ মি.মি পর্যন্ত কমাতে পারে। এছাড়াও অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, দৈনিক ৬০০ থেকে ২৪০০ মিলিগ্রাম রসুন সেবনের ফলে রক্তচাপ ২.৫ থেকে ১১.২ মি.মি পর্যন্ত কমতে পারে।
শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা রাখলেও স্বাভাবিক রক্তচাপের ব্যক্তির শরীরের রক্তচাপ কমাতে রসুন ততটা কার্যকরী ভূমিকা রাখে না। আর তাই স্বাভাবিক রক্তচাপের মানুষ যদি রসুন খাদ্য হিসেবে গ্রহণও তবে তার নিন্ম রক্তচাপ হওয়ার কোনো ভয় নেই।
রসুনে সাধারণত অ্যালিসিন নামের এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। অ্যালিসিন রক্তের এনজিওটেনসিন ২ নামক একটি রাসায়নিক যৌগ তৈরিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। কেননা এনজিওটেনসিন ২ রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে রাখে এবং এর ফলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে অ্যালিসিনের প্রভাবে রক্তে এনজিওটেনসিন ২ কম তৈরি হয় এবং এর অভাবে রক্তনালী প্রসারিত হয়ে শরীরের রক্তচাপকে কমিয়ে দেয়। এছাড়াও রসুনে থাকা অ্যালিসিন হাইড্রোজেন সালফাইট, নাইট্রিক অক্সাইড, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের থেকেই চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে রসুন ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা গুণ থাকলেও রসুনের অল্প কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যার মধ্যে পাকস্থলীতে অস্বস্তি, তলপেটে ব্যাথা ও গ্যাসের সমস্যা অন্যতম। এছাড়াও আরোগ্য লাভে নিয়মিত রসুন সেবনে মাথা ব্যাথা, শুষ্ক মুখ, কফ ও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এ উপসর্গের কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করে না।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাদ্য হিসেবে রসুন গ্রহণের পরিমিত মাত্রা রয়েছে যা মেনে চলা আবশ্যকীয়। তেল, পাউডার, নতুন বা পুরাতন রসুনভেদে এর সময়কাল ও পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। যেমন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ১৬ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১২.৩ মি.গ্রা রসুনের তেল, ৬ মাস ধরে প্রতিদিন ৪০০ মি.গ্রা রসুনের পাউডার কিংবা ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ডিম মিশ্রিত ১৮০ মি.গ্রা রসুনের পাউডার ওষুধ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ২ থেকে ২৩ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২৪০ থেকে ২৪০০ মি.গ্রা পুরনো রসুন ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করলে।
তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকল্প হিসেবে যে শুধু রসুনই ব্যবহার করা হবে বিষয়টি এমন নয়। বরং ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই, কো এনজাইম ও আস্ত শস্যদানা জাতীয় খাদ্যও রসুনের পাশাপাশি ব্যক্তির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুন থেকে শুরু করে যেকোনো খাদ্যদ্রব্য নিয়মিত গ্রহণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: এমএসএন