কর্মীদের আর্থিক ‘ফিটনেসে’ বিনিয়োগ থেকে কোম্পানিই লাভবান হয়
বুদ্ধিদীপ্ত কর্মদাতারা– বা যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে চায়– তারা সব সময়েই শীর্ষ মেধাবিদের তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করতে আগ্রহী। তারা এসব মেধাবিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, প্রশিক্ষিত করে; তারা যেন চাকরি না ছাড়ে- সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। ফোর্বস অবলম্বনে
বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মীদের দুশ্চিন্তার কারণ অনেক। যেমন আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং বিশ্ববাজার গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা দ্য হ্যারিস পোলের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকই চিন্তাক্লিষ্ট এবং উদ্বিগ্ন।
কর্মদাতাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য থাকে, কর্মীর পেছনে বিনিয়োগ থেকে উচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা। এজন্য মানসম্মত চাকরিতে মূল বেতনের পাশাপাশি চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হয়। তবে অন্তত ৬৫ শতাংশ কর্মী জরিপে জানিয়েছেন যে, আর্থিক ব্যবস্থাপনাই তাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ। এদের অন্তত অর্ধেকই বলেছেন, এনিয়ে দুশ্চিন্তা তাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটায় বা মনোযোগ অন্যত্র রাখে।
অর্থাৎ, কর্মীরা জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত আর্থিক (সঙ্গতির) নিশ্চয়তা চান কর্মদাতাদের থেকে। আর যখন নিয়োগকর্তারা কর্মীদের এটি অর্জনে সহায়তা করেন- তখন শুধু কর্মীরাই লাভবান হন না, প্রতিষ্ঠানও হয়। কারণ এতে চাকুরেদের শারীরিক ও মানসিক চাপ দূর হয় এবং তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরো কৃতজ্ঞ, অনুগত হয়ে ওঠে। আর আগেই বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদে সফলতার সাথে ব্যবসা করতে চায়, তারা বিভিন্নভাবে কর্মীদের সাহায্যের চেষ্টাও করে।
কর্মীদের আর্থিক উপযুক্ততা বা 'ফিটনেস' নিশ্চিত করতে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিষ্ঠান কীভাবে বিনিয়োগ করবে– সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ফোর্বস কাউন্সিলের সদস্য রবি স্বামীনাথন।
শুধু উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন ঘটানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়
কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের আর্থিক উদ্বেগ দূর করার পদক্ষেপ নেয়, কিন্তু একইসঙ্গে সে অনুযায়ী আরো বেশি কাজ আদায়েরও চেষ্টা করে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নেওয়াটা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
কারণ, আর্থিক সঙ্গতি নিশ্চিত করা সার্বিকভাবে কর্মীর– সুস্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ; যার আওতায় রয়েছে– শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, আবেগ-অনুভূতি ও পেশাগত উন্নয়ন। তাই এর একটি দিক অবহেলিত হলে প্রকৃতপক্ষে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে।
কোম্পানির জীবনমান উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে, তারাও কোম্পানিতে নিজদের সর্বোচ্চটা দেবে
শুধু চাকরির দায়িত্ব আদায়ে নয়; একজন কর্মীর ওপর সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরামর্শটি অনেকের কাছেই একঘেয়ে মনে হতে পারে। তবে এটা কোনো গতানুগতির কথা নয়, কারণ যেকোনো ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- দক্ষ মানবসম্পদ। এজন্য স্মার্ট কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক উপযুক্ততা (ফিটনেস) নিশ্চিত করতে নানারকম সম্পদ নিয়োজিত করে। এক্ষেত্রে সবার জন্য গড়পড়তা বা একই ব্যবস্থায় না নিয়ে ব্যক্তি-চাহিদা ভিত্তিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়াটাই কাম্য।
যেমন– আপনার বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে একজন তরুণ কর্মী থাকতে পারেন, যিনি স্মাতক পাস করতে ঋণ করেছিলেন। অন্যদিকে, ৫৫ বছরের একজন কর্মী হয়তো করছেন অবসরের পরিকল্পনা। তারা যেন তাদের আয় সুষ্ঠুভাবে দেনা বা সঞ্চয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন– এজন্য তাদের পৃথক ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে কর্মশালা বা সেমিনার আয়োজন হতে পারে আনুষ্ঠানিক একটি প্রক্রিয়া। কর্মীদের আর্থিক সঙ্গতিকে তাদের সামাজিক অবস্থান ও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সাযুজ্য রেখে উন্নয়নের উদ্যোগ কোম্পানিও নিতে পারে।
এসব প্রচেষ্টা কর্মীর প্রতি আপনার প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার ও সযত্ন মনোযোগকে তুলে ধরবে। একারণে হয়তো অবসরে যাওয়া অনেক কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম করবে, এমনকী কর্মজীবনে আপনার প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মেধা, দক্ষতার পাশাপাশি অর্থ বিনিয়োগেও উৎসাহী হবে। এতে মেধাবি কর্মীদের চাকরি ছাড়ার হারও কমতে পারে উল্লেখযোগ্যভাবে। সংকটকালে এসব মেধাই এগিয়ে নিতে সাহায্য করে কোম্পানিকে।
কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা থেকে কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনকে যুক্ত করার এই কাজটা স্মার্ট নিয়োগকর্তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করেন। এতে কর্মীর অফিসের কাজের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, তার বাইরেও তাদের প্রতি যত্নশীল থাকার দিকটি প্রকাশ পায়।
পরিশেষে আবারো বলা বলতে হয়, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য কর্মীর সার্বিক সুস্বাস্থ্যের অন্যতম অঙ্গ। আর এদিকে প্রতিষ্ঠান যত্নশীল হলে– তার পুরষ্কার সবার ভাগেই জুটবে।