মেট্রোরেল চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ঢাকাবাসী
মেট্রোরেল চালু হওয়াতে অনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ঢাকার বাসিন্দারা, বিশেষ করে যারা মেট্রোরেল রুটের আশেপাশের এলাকায় বসবাস করেন।
গত কয়েকবছর ধরে মেট্রোরেলের কাজের জন্য যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণসহ নানান সমস্যায় মধ্যে ছিলেন নির্মাণ এলাকার বাসিন্দারা। অবশেষে, বুধবার মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মাধ্যমে ভোগান্তি কেটেছে সাধারণ মানুষের। সেইসঙ্গে কমেছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াতের সময়। এতে সব মিলিয়ে খানিকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে মেট্রোরেল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
তবে, মেট্রোরেল শুধু উত্তরা থেকে সরাসরি আগারগাঁও পর্যন্ত চলায়, কিছুটা হতাশা মিরপুরবাসী।
মিরপুর এলাকার ব্যবসায়ী-মালিকরা বলছেন, মেট্রোরেলে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন তারা। কারণ এতে উত্তরা থেকে তাদের যাতায়াত হবে সহজ এবং বাঁচবে অনেকটা সময়। তবে এই সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবেন এমআরটি-৬ রুটের সমস্ত স্টেশন চালু হওয়ার পরে।
উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের এই রুটে যাতায়তে বাঁচবে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা সময়। এতে ব্যাপক উচ্ছ্বসিত তারা।
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাবাসী নাবিল হাসান। তিনি বলেন, "এই এলাকার যারা মহাখালী, তেজগাও, কাওরানবাজার বা তারপরের কোনো এলাকায় অফিস করেন, তাদের প্রতিদিন জ্যামের কারণে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। মেট্রোরেল হওয়াতে সেই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া গেলো। অন্তত আগারগাও পর্যন্ত ১০ মিনিটে পৌছাতে পারবো। এটি অনেক বড় ব্যপার।"
আরাফাত সানি নামের আরেকজন বলেন, "এখানে মেট্রোরেলের স্টেশন হওয়াতে লোকজনের সমাগম বাড়বে। এলাকার উন্নয়ন হবে। মানুষের আয়ের উৎস তৈরি হবে।"
শ্যমলী থেকে আসা সানোয়ার হোসেন বলেন, "মেট্রোরেলের উদ্বোধনের সাক্ষী হলাম। কী যে এক আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না।"
তবে, নিরপত্তার কারণে অনেকেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে পারেন নি।
ফার্মগেট থেকে আসা রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ নিয়ে বলেন, "মেট্রোরেল চালু হওয়াটা দেশের জন্য একটি বিশাল ব্যাপার। একটি ইতিহাস। এসেছিলাম সেই ইসিহাসের সাক্ষী হতে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানস্থল কিংবা স্টেশনের আশেপাশেও যেতে দেওয়া হয়নি।"
এই ব্যপারে নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, যাদের কাছে পাস ছিল না, তাদের জন্য মূল অনুষ্ঠানস্থলের একেবারে পেছনে ব্যবস্থা ছিল। তাদের জন্য আলাদা গেটও ছিল।
"সকাল থেকে আমরা তাদের সেখানে প্রবেশ করিয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আসার একঘন্টা আগে তাদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। এরপর কার্ড ছাড়া যারাই এসেছেন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমরা তাদের ঢুকতে দেইনি," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, বেশ কিছু উৎসুক জনতা নিষেধ সত্ত্বেও স্টেশন প্লাজায় প্রবেশ করলে, পরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের বের করে দেন।
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোনো স্টপেজ ছাড়াই সার্ভিস শুরু হওয়ায় মিরপুরের বাসিন্দারা কিছুটা অসন্তুষ্ট।
গত কয়েকবছর ধরে মিরপুরবাসী মেট্রোরেলের কাজের জন্য তীব্র যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণসহ নানান সমস্যায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে বুধবার মেট্রোরেলের উদ্বোবধন হলেও এর সুবিধা তারা ভোগ করতে পারছেন না এখনই।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে জনসাধারণের জন্য মেট্রোরেল সেবা চালু হলেও মিরপুরের বাসিন্দারা এতে চড়তে পারবেন ২০২৩ সালের ২৬ মার্চের পর থেকে। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। থামবে না এর মধ্যেবর্তী কোনো স্টেশনে।
মিরপুর-১১ এর বাসিন্দা মোঃ আলীম বলেন, "আমার একটি ফাস্টফুডের দোকান ছিল মিরপুর-১১ তে। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর ৬ মাসের মধ্যে তা বন্ধ করে দিতে হয়। চলাচলে সমস্যা ও ধুলাবালির কারণে এদিকে লোকই আসত না।"
"শুধু আমারটিই নয়, ৫/৬ বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজের কারণে মিরপুরে কয়েকশো দোকান, হোটেল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে," যোগ করেন তিনি।
এমনকি অতিরিক্ত ধূলার করণে এই এলাকার অনেকেই বাসা ছেড়ে চলে গেছেন সেই সময়ে। বাসা ভাড়া যাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল, তাদের অনেকেরই কঠিন সময় পার করতে হয়েছে বলেন জানান মোঃ আলীম।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলেও মিরপুরে আগের সেই জমজমাট অবস্থা এখনও ফেরে নি।
মিরপুর-১২ এর বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, মেট্রোরেলের কাজে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী মিরপুর এলাকার লোকজন। অথচ শুরু থেকে সেখানকার স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামবে না।
"এটি চালু হওয়াতে আমরা আনন্দিত; তবে সকল স্টেশনে থামলে আরও বেশি আনন্দিত হতাম। সরকার আমাদের বঞ্চিত করলো," বলেন রাজু।
উত্তরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা হালিমা বেগম। তিনি জানান, মেট্রোরেলের কাজের কারণে গত কয়েক বছর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। কিন্তু এখন রাস্তা ঠিক হলেও তারা মেট্রোরেলে উঠতে পারছেন না।
"আশায় ছিলাম ২৮ তারিখ উদ্বোধন হলে অফিসে যেতে ভোগান্তি কমবে, কিন্তু ২৬ মার্চের আগে আগারগাঁও ছাড়া অন্য কোথাও না থামলে মেট্রোরেল পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবো না। এখন সেই আগের মতো বাসেই যাতায়াত করতে হবে," বলেন হালিমা।
মেট্রোরেলের শেওড়াপাড়া স্টেশনের কাছের একটি ফস্টফুডের দোকানী আবুল হাসেম। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্দকে তিনি বলেন, "মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের সময় ফুটপাত, রাস্তা ভাঙার কারণে ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ হয়ে পড়েছিল। এখন ঠিক হয়েছে; আমরা অনেক খুশি, কিন্তু স্টেশন চালু না হওয়ায় কাঙ্খিত ব্যবসা পাবো না।"