২০২২ সালে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৯৫১ জন: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
গেল বছর দেশে ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জনের প্রাণ ঝরেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে এসব সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২৩৫৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির এ সংখ্যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ থেকে সংকলন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, এই আট বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, গতবছর রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত এবং ৩৫৭ জন আহত হয়েছে। নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ৭৪৩ জনের কোনো সন্ধান এখনও মেলেনি।
সবমিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৭৬১৭টি দুর্ঘটনায় ১০৮৫৮ জন নিহত এবং ১২৮৭৫ জন আহত হয়েছেন বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে।
মোজাম্মেলন হক বলেন, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৯.৮৯%। তাতে মৃত্যু ২৭.৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ৮ বছরের মধ্যে ২০২২ সালেই সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই সময়ে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলকে দুর্ঘটনা বাড়ার একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে সড়কে যারা দুর্ঘটনায় পড়েছেন, তাদের ৩০৯০ জন চালক, ১৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১৩২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা, ৫ জন শিল্পী, ৯ জন আইনজীবী, ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এসব দুর্ঘটনার ২৭.৭০% জাতীয় মহাসড়কে, ৫২.২% আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১১.৮৮% ফিডার রোডে ঘটেছে।
সারা দেশে হওয়া মোট দুর্ঘটনার ৫.৬৭% ঢাকা মহানগরীতে, ১.৭১% চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০.৯৯% রেলক্রসিংয়ে হয়েছে।
এক দিনে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে ১৫ জুলাই, সেদিন ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর, সেদিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ২৯ জুলাই, সেদিনে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন।
সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের চেয়্যারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।