ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেসে বলসোনারো সমর্থকদের হামলা
ব্রাজিলের বর্তমান বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই গোটা ভোট প্রক্রিয়াতে কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন বলসোনারো। এমনকি রাজনৈতিক প্রথা ভেঙে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে গতকাল রবিবার ব্রাজিলের ডানপন্থি সাবেক রাষ্ট্রপতি বলসোনারোর সমর্থকরা দেশটির রাষ্ট্রপতির ভবন, সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেসে হামলা চালিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটায় বলসোনারোর বিপুল সংখ্যক সমর্থক জড়ো হন দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভবনের সামনে। প্রেসিডেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস- এ তিন জায়গায় একসঙ্গে গোলযোগ শুরু করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা।
ইতিমধ্যেই হামলার একাধিক ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ভবনগুলোতে ঢুকে ভাঙচুর করেছে উন্মত্ত জনতা।
শোনা যাচ্ছে, ভবনগুলোর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র চুরিও করেছে হামলাকারীরা। একইসাথে নানা জায়গায় ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। সামরিক অভ্যুত্থানের দাবিতে সেখানে ব্যানারও লাগানো হয়েছিল। অন্যদিকে আচমকা এ হামলা থামাতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছে পুলিশ। এমনকি হেনস্তা করা হয়েছে সাংবাদিকদেরও।
যদিও এই হামলায় নিজের ভূমিকার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। হামলার পরে টুইট করে তিনি এই তাণ্ডবের কড়া নিন্দা করেছেন। তবে সেই সঙ্গে সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার দেশের মানুষের রয়েছে।
হামলার সময় রাজধানীতে উপস্থিত ছিলেন না বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা। বন্যা বিধ্বস্ত আরারাকোয়ারা শহরে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। হামলার খবর পেয়েই লুলা সরাসরি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলসোনারোকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
বিরোধী দলের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে 'ফ্যাসিস্ট' হামলা বলে আখ্যা দিয়েছেন বর্তমান এ প্রেসিডেন্ট। একইসাথে সাফ জানিয়ে দেন, হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে কড়া শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যেই হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ তিন ভবনে প্রতিপক্ষের এই হামলা যেন বছর দুয়েক আগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এভাবেই হামলা চালিয়েছিলেন পরাজিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
এদিকে ব্রাজিলে হামলার কড়া নিন্দা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গণতন্ত্রের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করে ব্রাজিলের মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বাইডেন ছাড়াও জাতিসংঘ প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস-সহ একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এই হামলার নিন্দা করেছেন।