১৪ জুলাইতেই বিদিশার সাথে পরিচয় হয়েছিলো এরশাদের!
২০১৯ সালের ১৪ই জুলাই সকালে ৮৯ বছরের জীবনের লেনদেন চুকিয়ে পরপারে চলে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আরও একটি কারণে এই ১৪ই জুলাই তারিখটি এরশাদের জীবনে ছিলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জীবনের অন্যতম আলোচিত অধ্যায় ছিলো বিদিশা ইসলামের সাথে প্রেম ও পরিণয়। কাকতালীয়ভাবে বিদিশার সাথে এরশাদের প্রথম পরিচয়ের দিনেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন এরশাদ।
নিজ বয়সী কবি ও শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশা ইসলামের প্রেমে পড়েন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রায় ছয় বছরের পুরো জেল জীবনে বিদিশার সাথে প্রেম করে ২০০০ সালে ঘোষণা দেন যে তিনি বিদিশাকে বিয়ে করেছেন। তাদের বিয়ে হয় লন্ডনে। তবে সে বিয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় পরবর্তীতে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদিশাকে বিয়ে করেন এরশাদ। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় বিচ্ছেদের পর বিদিশাকে তিনি চুরির মামলায় জেলে পাঠান। তখনকার মতো থেমে যায় এরশাদ-বিদিশা পর্ব।
এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা ইসলাম ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’ নামে তার আত্মজীবনী বইতে তার জীবনে এরশাদ অধ্যায়ের পূর্বাপর নিয়ে লিখেছেন। বিদিশা সেই বইয়ে ‘এরশাদ: প্রেমিকের আবির্ভাব’ বিয়ে লিখেছেন, “সেই দিনটির কথা আমার খুব মনে পড়ে। ১৪ জুলাই, ১৯৯৮ সাল। সেটা ছিল ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল ডে। এদিনই এরশাদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা।”
এরপর বিদিশা তার বইয়ে লেখেন, “ফ্রেঞ্চ অ্যাম্বাসেডরের বাসায় যখন পৌছালাম তখন রাত হয়ে গেছে। পার্টি হচ্ছিল বাগানে। আমাকে দেখে অ্যাম্বাসেডর এগিয়ে এলেন, হাত মেলালেন। কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বাসেডর আবার এলেন আমার কাছে। বললেন, ‘এসো তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। এই ভদ্রলোক তোমাদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, এরশাদ।’ এই বলে তিনি আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন ভদ্রলোকের সামনে। লম্বা, একহারা গড়নের বয়স্ক লোক। কত হবে তার বয়স? ৫০ ও হতে পারে, আবার ৭০ ও হতে পারে। তবে প্রথম দর্শনে মনে হলো, নিজেকে নিয়ে খুবই সচেতন তিনি। এই সচেতনতা নিজের শরীর নিয়ে যেমন তেমনি পোশাক নিয়েও। বেশ দামি পোশাক, জুতা, ঘড়ি ছিল তার পরনে।”
ফ্রেঞ্জ অ্যাম্বাসেডর সেই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন, এক্সিলেন্সি দিস ইজ বিদিশা। ফ্যাশন ডিজাইনার। শি এক্সপোর্টস গার্মেন্টস টু আওয়ার কান্ট্রি।’
ভদ্রলোক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। হ্যান্ডশেক করলেন।
‘হাই।’
‘গুড ইভিনিং এক্সিলেন্সি’, আমি বললাম।
‘আই সি ইউ আর ভেরি টল। আর ইউ ফ্রম হেয়ার?’
‘ওহ ইয়েস।’
‘আর ইউ বেঙ্গলি?’
‘ইনডিড, আই এম।’
‘ডু ইউ স্পিক বাংলা? বাংলা বলতে পারো?’
‘অফকোর্স আই ডু। আমি বাংলা বলতে পারি। অ আ ক খ সবই শিখেছি।’
‘তোমার ফ্যামিলি কোথায়?’
তার এই প্রশ্নটি বুঝতে আমি ভুল করেছিলাম। আসলে সে জানতে চেয়েছিল আমি এখানে কার সঙ্গে থাকি, বিয়ে হয়েছে কি না, স্বামী আমার সঙ্গে থাকে কি না, ইত্যাদি। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম, তিনি বুঝি আমার বাবা-মা’র কথা জানতে চাইছেন।
বললাম, ‘আমার বাবা রাজশাহী থাকেন। আপনি আমার বাবাকে চিনবেন। তিনি অবশ্য আপনাকে পছন্দ করেন না। তিনি আপনাকে ‘স্বৈরাচার’ ডাকেন।
এতোক্ষণ তিনি আমার হাত ধরেছিলেন। আমার মুখে স্বৈরাচার শব্দটি শোনা মাত্রই হাত ছেড়ে দিলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার বাবা কে?’
‘কবি আবু বকর সিদ্দিক।’
সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিনতে পারলেন।
‘আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন একবার আমার হাত থেকে পুরষ্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। আমার মনে আছে।’
তারপর একটু থেমে বললেন, ‘আশা করিও তুমিও আমাকে স্বৈরাচার বলবে না।’
আমি কিছু বললাম না।”
এরপর পেরিয়েছে তাদের জীবনের বহু পর্ব। রাজনীতির ভেতরে-বাইরে তাদের সম্পর্ক নিয়ে হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকালে এরশাদের মৃত্যুর পর বিদিশা তার ফেসবুক পেইজে তার সাবেক স্বামী ও প্রেমিক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে নিয়ে শেষবারের মতো একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি লেখেন, “এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমীর শরীফ আসলাম আর তুমি ও চলে গেলে ।এতো কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল। আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়াতে যেখানে থাকবেনা কোনো রাজনীতি।”