দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ১২ চিতা আসবে প্রতিবছর
ভারত থেকে বিলুপ্ত চিতার বসবাস ও বংশবৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতি বছর ভারতকে ১২টি করে মোট ১০০টি চিতাবাঘ দেবে। খবর বিবিসির।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১২টি চিতার প্রথম চালান আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে পাঠানো হবে ভারতে।
১৯৪০ সালের দিকে ভারতে একদিকে বাসস্থানের অভাব; অন্যদিকে শিকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে চিতার অস্তিত্ব আশঙ্কাজনক হারে বিলীন হতে থাকে। যার ফলে ১৯৫২ সালে প্রাণীটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ভারত সরকার। তবে মোদি সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৭০ বছর পর আবারও দেশটিতে চিতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২০ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটিতে পুনরায় চিতার বাসস্থান সৃষ্টির বিষয়ে অনুমতি দেয়। একইসঙ্গে, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আফ্রিকান চিতা দেশে আমদানি করে কোনো নিরাপদ স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বাসস্থান তৈরি করা যেতে পারে বলে মত দেন।
সম্প্রতি সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৮ থেকে ১০ বছর পর্যায়ক্রমে ভারতকে স্থলভাগের দ্রুততম এই প্রাণী পাঠাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। চুক্তিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে করে ভারতে ধীরে ধীরে চিতার একটি নির্ভরযোগ্য বাসস্থান গড়ে উঠবে। তবে আফ্রিকা থেকে এই চিতাগুলোকে দেশে এনে কোথায় রাখা হবে সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানানো হয়নি।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারতে যে সকল চিতা পাঠানো হবে সেগুলোকে পরিবর্তিত ভৌগলিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।
প্রকল্পটির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অ্যাড্রিয়ান টরডিফ বলেন, "চিতাগুলোকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং সবগুলো চিতা সুস্থ রয়েছে।"
সিএনএন এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গতবছর ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী ভুপেন্দর ইয়াদাব চিতাসহ আরও বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় মোদি সরকারের নীতিগত অবস্থানের কথা জানান।
ভুপেন্দর আরও বলেন, "ভারত থেকে বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী চিতার অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে সরকার 'প্রজেক্ট চিতা' গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের অধীনে আগামী পাঁচ বছরে ভারতের বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্কের জন্য প্রায় ৫০ টি চিতা দেশে আনা হবে।"
দেশের বাইরে থেকে চিতা আমদানি অবশ্য ভারতের জন্য নতুন নয়। গতবছর দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া থেকে মোট ৮টি চিতা আমদানি করেছিল ভারত। প্রধামন্ত্রী মোদির জন্মদিনে আমদানিকৃত চিতাগুলো মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রচুর তৃণভূমি সহ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য খ্যাত কুনো ন্যাশনাল পার্কটি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত। প্রথমে নামিবিয়া ও পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতার আমদানির মাধ্যমে ভারতে চিতার বাসস্থান তৈরির পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে।
তবে, বাসস্থান তৈরির জন্য নির্ধারিত জায়গাগুলোর আশেপাশে জনবসতি থাকায় চিতার বাসস্থান তৈরির এ পদক্ষেপের সাফল্য নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।