শেয়ার বাজারে আদানি গ্রুপের ধস; ৬ দিনে উধাও ১০০ বিলিয়ন ডলার!
রকেটের মতো উত্থান হয়েছিল আদানি গ্রুপের। কিন্তু এখন শেয়ার বাজারে গ্রুপটির যে ধস নেমেছে, তাতে কোনওভাবেই যেন লাগাম পড়ছে না। অনেকটা হুড়মুড়িয়ে পড়ছে শেয়ারের দাম। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তো আদানি গ্রুপের যে সাতটি সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত রয়েছে, সেগুলির মধ্যে পাঁচটি সংস্থাই ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছে।
আজ (শুক্রবার) ভারতীয় সময় সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে আদানি এন্টারপ্রাইজের প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১,৪০৮.২৫ টাকা। যা ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তর। আজ শেয়ারের ১০ শতাংশ পতন হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত আদানি গ্রুপের সাতটি সংস্থার মূলধন ১০০ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছে। সেটাও হয়েছে মাত্র ছয়দিনে।
'হিন্দুস্তান টাইমস' গ্রুপের 'লাইভ মিন্ট'-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনস লিমিটেড এবং অম্বুজা সিমেন্টের উপর বাড়তি নজরদারি চালু করছে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)। যা আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ ওই তিনটি সংস্থার শেয়ারের উপর আরও কড়া নিয়ম জারি করছে এনএসই।
বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধের সময় আদানির সাতটি সংস্থার শেয়ারের কী অবস্থা হয়েছিল?
১) আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার: এফপিও প্রত্যাহারের পর বিএসইতে (বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ) ধসে গিয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাজার বন্ধের সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম নেমে যায় ১,৫৬৪,৭ রুপিতে। পতন হয় ২৬.৫ শতাংশ। একটা সময় ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরেও নেমে গিয়েছিল (১,৫১৩.৯ রুপি)। যে সংস্থার গত এক বছরের সর্বোচ্চ স্তর হল ৪,১৮৯.৫৫ রুপি (২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি)।
২) আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনস লিমিটেডের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিএসইতে আদানি গ্রুপের আরও একটি শেয়ার ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। একটা সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ঠেকেছিল ৪২৩ রুপিতে। পরে তা বেড়ে বাজার বন্ধের সময় হয় ৪৬২ রুপি। সার্বিকভাবে বৃহস্পতিবার ৬.১৩ শতাংশ পতন হয়।
৩) আদানি পাওয়ারের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৪.৯৮ শতাংশ কমে গিয়েছে আদানি পাওয়ারের শেয়ারের মূল্য। বিএসইতে বাজার বন্ধের সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ঠেকে ২০২.১৫ রুপিতে।
৪) আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিএসইতে আদানি গ্রুপের আরও একটি শেয়ার ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তর ছুঁয়ে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধের সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ঠেকে ১,৫৫৭.২৫ রুপিতে। সেটাই ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তর। বৃহস্পতিবার ১০ শতাংশ পতন হয়।
৫) আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাজার বন্ধের সময় বিএসইতে ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্নে নেমে যায়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ১,০৩৮.০৫ রুপিতে ঠেকে। বৃহস্পতিবার আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের শেয়ারের দর কমে যায় ১০ শতাংশ।
৬) আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিএসইতে ১০ শতাংশ পতনের সাক্ষী থেকেছে। বাজার বন্ধের সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ঠেকে ১,৭১১.৫ রুপিতে। যা ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরের (২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ১,৫১৩ রুপি) থেকে খুব একটা দূরে নেই। অন্যদিকে, ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তর হল ৩,৯৯৮.৩৫ টাকা। যে স্তরে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ছুঁয়েছিল। ঠিক পরদিনই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
৭) আদানি উইলমারের শেয়ার: গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৪.৯৯ শতাংশ পতন হয়। বাজার বন্ধের সময় বিএসইতে প্রতিটি শেয়ারের দাম ঠেকে ৪২১.৪৫ রুপিতে।
তবে কেন আদানি গ্রুপ এই চাপের মধ্যে আছে? চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা এবং কারচুপির অভিযোগ তোলে মার্কিন এ সংস্থাটি। যদিও হিন্ডেনবার্গের এ অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদানি গ্রুপ। তারপরই শেয়ার বাজারে আদানি গ্রুপের শেয়ারে ধস নামে।