মার্কিন কোম্পানির উপকরণে দেশেই স্বল্প-মূল্যের ইনসুলিন উৎপাদন করবে সেন্টিওন ফার্মা
ঢাকার গাজীপুরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বল্প-মূল্যের ইনসুলিন উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করছে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের (আইএবিএল) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেন্টিওন ফার্মা লিমিটেড।
উৎপাদনে মান নিশ্চিত করতে ইনসুলিন ক্রিস্টাল বা অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়ান্ট (এপিআই) ব্যবহার করবে সেন্টিওন, যা তারা যুক্তরাষ্ট্র -ভিত্তিক এলি লিলি কোম্পানি থেকে আমদানি করবে। এলি লিলি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ইনসুলিন প্রস্তুতকারক। ২০২৫-৩০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় তাদের থেকে কাঁচামালটি কিনবে সেন্টিওন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আইএবিএল- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী স্বপন কুমার মোদক বলেন, 'চুক্তির আওতায়, পাঁচ বছর আমাদের ভর্তুকিমূল্যে ইনসুলিন ক্রিস্টাল সরবরাহ করবে লিলি। চুক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তা নবায়নের সুযোগ থাকবে'।
তিনি জানান যে, লিলির ক্রিস্টাল দিয়ে দেশেই ইনসুলিন উৎপাদন করা গেলে, ডায়াবেটিস রোগীদের ৪০ শতাংশ কম মূল্যে বিশ্বমানের ইনসুলিন সরবরাহ করা যাবে।
'২০৩০ সাল নাগাদ ১০ লাখ ডায়াবেটিস রোগীকে ইনসুলিন সরবরাহ করাই আমাদের লক্ষ্য' যোগ করেন তিনি।
আইএবিএল- এর অভ্যন্তরীণরা জানান, কোম্পানিটি ২০০৬ সাল থেকেই দেশে এলি লিলির প্রস্তুতকৃত ইনসুলিন আমদানি করছে। বর্তমানে তাদের আমদানি করা ইনসুলিনের দাম ৮৪০ টাকা; সে তুলনায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোর ইনসুলিন সাড়ে ৪শ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
এপ্রসঙ্গে স্বপন কুমার বলেন, 'লিলির আমদানি করা ইনসুলিন মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। যদি দেশেই উৎপাদন করা যায়, তাহলে গ্রাহকের সাধ্যের মধ্যে আসবে'।
তিনি আরো বলেন, 'আইএবিএল এর মাধ্যমে লিলি কাছ থেকে ক্রিস্টাল (এপিআই) কেনা হবে, এরপর তা দিয়ে সেন্টিওন ফার্মার কারখানায় ইনসুলিন উৎপাদন করা হবে। গাজীপুরের মাওনায় এজন্য একটি ডেডেকেটেড কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। এটি ২০২৫ সাল থেকে উৎপাদনে যাবে'।
এলি লিলি একটি রক্ষণশীল কোম্পানি বলে উল্লেখ করে স্বপন বলেন, তারা অন্য কোনো কোম্পানির মাধ্যমে নিজেদের ওষুধ উৎপাদন করে না। তবে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় স্বল্প-মূল্যে ইনসুলিন সরবরাহের জন্য তারা এখন কম দামে এপিআই দিচ্ছে।
'এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে লিলির সাথে এসম্পর্কিত চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ' যোগ করেন তিনি।
আইএবিএল- এর বিপণন ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল সোয়েব বলেন, 'এলি লিলি আমাদের শুধু এপিআই দেবে। কোনো প্রযুক্তি বা ফর্মুলা দেবে না। তাদের এপিআই দিয়ে প্রস্তুতকৃত ইনসুলিন আমাদের ব্র্যান্ডের নামে বাজারজাত করা হবে'।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মিসরের ইভা ফার্মা কোম্পানির সাথে চুক্তির কথা ঘোষণা করে লিলি। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে, যার বেশিরভাগই আফ্রিকার– তাদেরকে সুলভ মূল্যে ইনসুলিন সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে কোম্পানিটির, যা তাদের ৩০*৩০ নামক এক বৈশ্বিক উদ্যোগের অংশ। এর মাধ্যমে সীমিত সম্পদের ৩০ লাখ মানুষকে ২০৩০ সাল নাগাদ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চায়।
লিলি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ইলিয়া ইয়োফা বলেন, 'স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের জরুরি ওষুধ প্রাপ্তিতে যে ঘাটতি রয়েছে তা লাঘব করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ লিলি। এজন্য বিদ্যমান বাধাগুলোকে দূর করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যার মাধ্যমে ইনসুলিনের উৎপাদন ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ফলে রোগীরা আরো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারবে'।
আইডিএফ ডায়াবেটিস অ্যাটলাসের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগী। ২০৪৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ২ কোটি ২৩ লাখে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী চিকিৎসাধীন, এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ইনসুলিন নেন। দেশে ইনসুলিনের বাজার প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার।
বর্তমানে দেশের বাজারে ইনসুলিন উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে নোভোনর্ডিক্স। কোম্পানিটি এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে যৌথভাবে ইনসুলিন উৎপাদন করে।
এছাড়া, ইনসেপটা, বেক্সিমকো ফার্মা, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, স্কয়ার ও এসিআই-সহ স্থানীয় বেশ কয়েকটি কোম্পানি ইনসুলিন উৎপাদন করে।