গ্রীষ্মকাল: সবচেয়ে উষ্ণ ফেব্রুয়ারি মাস ভারতে, সামনে আরো দুঃসহ গরম আসছে
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ১৯০১ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণ ফেব্রুয়ারি ছিল গত মাস। ফলে তারা অনুমান করছেন, এবারের গ্রীষ্মকাল আরো খরতাপের হতে চলেছে।
উপমহাদেশে শীতের আমেজ সাধারণত ফেব্রুয়ারিতেও থাকে। কিন্তু, গত মাসে ২৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশটিতে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) পূর্বাভাস দিয়েছে যে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে তাপদাহের 'উচ্চ আশঙ্কা' রয়েছে। এতোটা স্থায়ী গরমে গমের মতো প্রধান শস্যের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে, একইসঙ্গে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে আইএমডি জানায়, 'উত্তরপূর্বের অধিকাংশ অঞ্চল, পূর্ব ও মধ্য ভারতসহ উত্তরপশ্চিমের কিছু এলাকায় মার্চ থেকে মে মাসে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়েও বেশি উষ্ণতা দেখা দিতে পারে'।
এর আগে পশ্চিম ভারতের জন্য আরো গুরুতর তাপদাহের পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমডি। পরে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপরেই নতুন এ পূর্বাভাস দেওয়া হলো।
উষ্ণতর গ্রীষ্মকাল ও তাপদাহ ভারতে নিয়মিত ঘটনা, বিশেষ করে মে থেকে জুন মাসে গরমের প্রকোপ থাকে বেশি। তবে গত বছরের মতো এবারও আগেই শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকাল। এর আগে গত বছরের মার্চ মাসও ১৯০১ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণ ছিল।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, ভারতে এখন আরো তীব্র তাপপ্রবাহ আরো ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে, এগুলোর স্থায়িত্বও বাড়ছে দিনকে দিন।
গত বছর খরতাপে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারণে গম রপ্তানি বন্ধ করে ভারত সরকার। ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দেশটির স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছিল।
এই প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারি মাসে চলতি বছরের ফসল উৎপাদন তদারকিতে একটি কমিটি গঠন করেছে প্রতিবেশী দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এসময় বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নাম না প্রকাশের শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, চলতি বছরের গম ফসল উৎপাদনের পরিস্থিতি অনুকূলে আছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গম উৎপাদক এবং বাংলাদেশের আমদানির অন্যতম উৎস।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে, দেশের গম আমদানির প্রধান উৎস ছিল- ভারত, কানাডা, রাশিয়া ও ইউক্রেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট গম আমদানি হয় ১,৫৫৮ মিলিয়ন ডলারের। যেখানে ২৪% ভারত, ২৩% কানাডা, ২১% রাশিয়া ও ১৭% এসেছে ইউক্রেন থেকে।
তাই ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে।
এদিকে গ্রীষ্মকাল উষ্ণতর হলে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে বাড়ে এসি, ফ্যানসহ বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের ব্যবহার। অধিক চাহিদার কারণে গত বছর ভারতের অনেক রাজ্যেই লোডশেডিং করা হয়।
চলতি বছরে এরমধ্যেই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। গত কয়েক সপ্তাহে যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে বলে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর অসহনীয় গরমের প্রভাব সম্পর্কেও সতর্ক করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ, দরিদ্রদের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান কম, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা দিনমজুরিসহ উন্মুক্ত পরিবেশের কায়িক শ্রমে জড়িত। কাজের অবসরে শরীর জুড়ানোর সুবিধাও তাদের সীমিত।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. চাঁদনী সিং বলেন, 'তাপপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। রাতেও তাপমাত্রা উচ্চ থাকলে শরীর জুরানোর সুযোগ পায় না। এতে মানুষের অসুস্থতা বাড়ে, বাড়ে চিকিৎসা ব্যয়'।
২০০০-২০০৪ এবং ২০১৭-২০২১ সালের মধ্যে ভারতে চরম উষ্ণতা-জনিত মৃত্যুর ঘটনা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে বলে গত বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানের শীর্ষ স্থানীয় জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।