নেত্রকোনায় কোয়ারেন্টিনের নামে গহীন হাওরে অবরুদ্ধ ১৭ পরিবার উদ্ধার
নেত্রকোনায় গহীন হাওরে অবরুদ্ধ করে রাখা ১৭টি গার্মেন্টস ফেরত পরিবারকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।
কোয়ারেন্টিনের নামে গ্রামবাসী ওই পরিবারগুলোকে দুর্গম হাওরে থাকতে বাধ্য করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের চানপুর গ্রাম সংলগ্ন কসমাকান্দা হাওর থেকে পরিবারগুলোকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া পরিবারগুলোতে ৫৬ জন নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরী রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চানপুর গ্রামের ১৭টি পরিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু গ্রামের ইউপি সদস্য দেবাশীষ দাস এবং আওয়ামী লীগ কর্মী দীপক দাস তাদের বাড়িতে উঠতে না দিয়ে দূরবর্তী হাওরের একটি ভিটায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করে। এরপর থেকে বেশ কয়েকদিন পরিবাররগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে। পরবর্তীতে কয়েকটি পরিবার হাওর থেকে খড় সংগ্রহ করে ঝুপড়ি ঘরের মতো বানিয়ে নেয়। কিন্তু প্রত্যেকটি পরিবারই চরম খাদ্যসঙ্কটে পড়ে। বিষয়টি জানার পর খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম এবং নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসনের একটি টিম মঙ্গলবার বিকালে ওই হাওরে যান। তারা পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠান। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেওয়া হয়।
উদ্ধার হওয়া একটি পরিবারের অভিভাবক মঙ্গল দাস (৪০) বলেন, "আমরা স্বেচ্ছায় নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেবাশীষ দাস ও দীপক দাসের নেতৃত্বে গ্রামবাসী আমাদের জোর করে হাওরে পাঠায়। নিরুপায় হয়ে আমরা হাওরে থাকতে বাধ্য হই।"
রীতা রানী দাস (১৮) নামে এক কিশোরী বলেন, "দাঁড়ানো যায় না এমন একটি খড়ের চালা তৈরি করে হাওরে প্রায় দুই সপ্তাহ কাটিয়েছি। ভয়ে রাত্রে ঘুমাতে পারিনি। খাবার পানি পাইনি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে দুর্বিসহ যন্ত্রণা ভোগ করেছি।"
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, "ওই পরিবারগুলোকে যারা হাওরে অমানবিকভাবে থাকতে বাধ্য করেছেন তারা ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। এটা রীতিমতো অপরাধের সামিল। আইনি প্রক্রিয়ায় এদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।"