দেবিদ্বারে স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে সংঘর্ষ, মামলা দায়ের, প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার
কুমিল্লার দেবিদ্বারে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিসহ ২টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ সময় জনতা-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫ পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে আরও অন্তত ১০জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটিতে বাদি স্কুলছাত্রীর বাবা, অন্যটিতে পুলিশ। পুলিশের করা মামলায় ১০ জনকে নামে ও অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। আর স্কুলছাত্রীর বাবার মামলায় মো. মোকতল হোসেনকে আসামী করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে ও সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় দফায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনা ছাত্রীর সহপাঠীরা দেখে ফেলে। তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে।
এসময় প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ছাত্র আহতের ঘটনায় পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অভিভাবকরাও আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে অংশ নেন।
খবর পেয়ে দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। রাত অবধি চলা বিক্ষোভে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ও প্রধান ফটক ভঙচুরের চেষ্টা করে। প্রধান শিক্ষকের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিসহ দুইটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে। পরে আজ বৃহস্পতিবার মোকতল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।