লিটন-শান্তর পর অনন্য-অসাধারণ মুশফিক, বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ
বড় সংগ্রহের পথে থেকেও আট রানের ব্যবধানে সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে হারিয়ে চাপ বেড়েছিল। বড় সংগ্রহ গড়া হবে না, এমন শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ব্যাটিং শুরু করা মুশফিকুর রহিম হয়ে উঠলেন শিল্পী, জাদুকরও বলা যায়। ছয় নম্বরে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে যা করতে চাইলেন, তা-ই হলো। মোহনীয় সব শটে করে ফেললেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি।
লিটন ও শান্তর সত্তুরের ঘরের ইনিসেংর পর মুশফিকের সেঞ্চুরি, সঙ্গে হৃদয়ের কার্যকরী ইনিংস; আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও রেকর্ড সংগ্রহ গড়লো বাংলাদেশ। সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আইরিশদের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পাহাড় গড়েছে তামিম ইকবালের দল। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের ম্যাচেই ৩৩৮ রান তুলে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস গড়েছিল ঘরের মাঠের দলটি।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশকে শুরুতে ধুকতে হয়েছে। ভেজা হাওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসকে রানই তুলতে দিচ্ছিলেন না আয়ারল্যান্ডের বোলাররা। প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ১৪ রান জমা হয় বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে। অষ্টম ওভারে অচলাবস্থা ভাঙলেও ১০ ওভারে বাংলাদেশ পায় ৪২ রান।
আর এই ওভারের শেষ বলে আসে প্রথম ধাক্কাও। বুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবাল। ফেরার আগে ৩১ বলে ৪টি চারে ২৩ রান করেন তিনি। এই ইনিংসে ১৪ রান করতেই ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) রানের মাইলফলকে পৌঁছান তামিম, বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই রেকর্ডের মালিক হলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
তামিমের বিদায় দলকে বুঝতে দেননি লিটন ও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়া এই দুই ব্যাটসম্যান দ্রুততার সঙ্গে ইনিংসের চেহারা পাল্টে দেন। শুরুর দিকের ধীর গতির রান তোলাটা সহজেই পুষিয়ে নেন লিটন-শান্ত। ৬ ওভারে ১৪ রান করা বাংলাদেশই ১০০ রান ছাড়ায় ২০ ওভারে।
দরকে ছন্দে ফিরিয়ে লিটন-শান্ত দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১০১ রান। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান পূর্ণ হয় লিটনের। যা যৌথভাবে বাংলাদেশের দ্রুততম। শাহরিয়ার নাফিসের সমান ৬৫ ইনিংসে দুই হাজার ক্লাবে নাম লেখান লিটন। বাংলাদেশের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে দুই হাজার রানের মালিক হলেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান।
চোখ জুড়ানো সব শটে সেঞ্চুরির পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু ২৬তম ওভারে গিয়ে খেই হারান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, ফ্লিক করতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। শুরুতে একেবারেই ধীর গতিতে রান তোলা লিটন ৭১ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৭০ রান করেন আউট হন, এটা তার অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর শান্তর সঙ্গে উইকেট যোগ দেওয়া সাকিব আল হাসানেও সাবলীল দেখাচ্ছিল। যদিও এদিন তিনি টিকতে পারেননি, ১৯ বলে ২টি চারে ১৭ রান করে আউট হন সাকিব।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া শান্তও একটু পরে বিদায় নেন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭৭ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। ৮ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও সেই চাপ নিমেষেই উবে যায় ব্যাট হাতে দুর্বার হয়ে ওঠা মুশফিকুর রহিম ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে। শুরু থেকেই শাসন করে খেলতে থাকেন তারা। পঞ্চম উইকেটে ৭৮ বলে ১২৮ রানরে জুটি গড়েন মুশফিক ও হৃদয়।
হৃদয় চেনা ছন্দে ব্যাট চালিয়েছেন, তবে মুশফিক এদিন হয়ে ওঠেন জাদুকর। আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়ায় হৃদয় ৩৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৯ রান করে বিদায় নেওয়ার পর আইরিশ বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন মুশফিক। শাসন করা ব্যাটিংয়ে ৬০ বলে পূর্ণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি, যা বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করেন সাকিব, এতোদিন এটাই ছিল দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
ইনিংসের শেষ বলে এক রান নিয়ে সাকিবের সেই রেকর্ড নিজের করে নেন মুশফিক। ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৬০ বলে ১৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন। এই ইনিংস দিয়ে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেছেন মুশফিক, ২৪৪ ওয়ানডেতে তার রান এখন ৭ হাজার ৪৫। ইয়াসির আলী রাব্বি ৭ বলে ৭ রান করেন। রান বন্যার ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের সেরা বোলার গ্রাহাম হিউম। আইরিশ এই পেসার ১০ ওভারে ৫৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মার্ক এডেয়ার ও কার্টিস ক্যাম্ফার।