অনেক মাইলফলকের ম্যাচ গেল বৃষ্টির পেটে
কভার ড্রাইভ, কাট, স্কুপ, সুইপ; সব শটই দেখা গেলো মুশফিকুর রহিমের খুনে ইনিংসে। কেবল তার অতি প্রিয় স্লগ সুইপেরই দেখা মিললো না। যদিও তাতে তার ইনিংসে কোনো প্রভাবই পড়লো না। অন্যান্য শট দিয়েই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঝড় তুললেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। যা করতে চাইলেন, তা-ই হলো। ৬০ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে গড়ে ফেললেন বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক, পূর্ণ হলো ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলকও।
লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্তর সত্তরোর্ধ্ব ইনিংস, তাওহিদ হৃদয়ের লড়াকু ইনিংসের পর মুশফিকের ব্যাটিং তাণ্ডব, তাতে বাংলাদেশ পায় ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের বিশাল সংগ্রহ। যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। কিন্তু মুশফিক ঝড় থামতেই সিলেটে শুরু হয় বৃষ্টির দাপট। সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে শুরু হওয়া বৃষ্টি আর থামলোই না। বাংলাদেশের অনেক মাইলফলক গড়ার ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পেটে। রাত ৮;৩২ মিনিটে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিত্যক্ত হলেও এই ম্যাচ থেকে দু'হাত ভরে পেয়েছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ২৩ রান করে বিদায় নিলেও ছুঁয়ে ফেলেছেন দারুণ এক মাইলফলক। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) ১৫ হাজার রান পূর্ণ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে অভিষেক হওয়া তামিম ৩৮৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১৫ হাজার ৯।
দারুণ ছন্দে থেকে রান ফোয়ারা বইয়ে দিয়ে যাওয়া শান্তর ব্যাট এই ম্যাচেও হেসেছে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৭৩ রানের দারুণ ইনিংস। এই ইনিংসে নাম কোনো রেকর্ডে না বসলেও শান্তর আক্ষেপ ঘুচতে শুরু করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে নিয়মিত রান করলেও জাতীয় দলে এই ফরম্যাটে তেমন কিছুই করা হচ্ছিল না। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে চিনিয়ে আসা শান্ত ১৬তম ম্যাচে এসে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির পরের চার ম্যাচে তিনি করেছেন ২টি সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম ব্যাটিং কাণ্ডারী লিটন আজ শুরুতে রান তুলতে সংগ্রাম করলেও পরে মানিয়ে নেন, এরপর খেলেন অসাধারণ এক ইনিংস। ৭১ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৭০ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। এই ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান পূর্ণ হয় লিটনের, যা যৌথভাবে বাংলাদেশের দ্রুততম। শাহরিয়ার নাফিসের সমান ৬৫ ইনিংসে দুই হাজার ক্লাবে নাম লেখান লিটন।
এই সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া তাওহিদ হৃদয়। দুই ম্যাচ দিয়েই মিডল অর্ডারের কাণ্ডারী হয়ে উঠেছেন ২২ বছর বয়সী তরুণ এই ব্যাটসম্যান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয় তার। দারুণ ব্যাটিংয়ে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি, খেলেন ৯২ রানের ইনিংস। যা ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের সেরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও হেসেছে তার ব্যাট, ৩৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৯ রান করেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকের পর টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে সেটা করতে পারেননি তিনি।
মাইলফলকের এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মুশফিক। অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান উইকেটে গিয়ে প্রথম দুটি বলে কিছুটা সংগ্রাম করেছেন। এরপর ব্যাট হাতে শাসন করেছেন, খেলেছেন মন জুড়িয়ে দেওয়া সব শট। ৬০ বলে ১৪টি চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততমে সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলা করা সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরিটি এতোদিন ছিল বাংলাদেশের দ্রুততম। নবম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার ম্যাচে তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক, ২৪৪ ওয়ানডেতে তার রান এখন ৭ হাজার ৪৫।