দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে দাসপ্রথার সংযোগ: গবেষণায় যা বেরিয়ে এসেছে
ট্রান্সআটলান্টিক দাসবাণিজ্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতাদের সংযোগ থাকায় সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার মালিকপক্ষ ক্ষমা চেয়েছে। এর পাশাপশি 'রিস্টোরেটিভ জাস্টিস' বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দশকব্যাপী প্রকল্প কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে পত্রিকার মালিক সংস্থা দ্য স্কট ট্রাস্ট লিমিটেড।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮২১ সালে সাংবাদিক ও তুলা ব্যবসায়ী জন এডওয়ার্ড টেইলর ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান নাম দিয়ে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় পত্রিকা প্রতিষ্ঠার জন্য জনপ্রতি ১০০ পাউন্ড দিয়ে টেইলরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলেন ম্যানচেস্টারের আরও ১১ ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) এক একাডেমিক গবেষণার প্রতিবেদনে উঠে আসে টেইলর এবং তাকে অর্থসহায়তা দানকারী ১১ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৯ জনেরই টেক্সটাইল শিল্পের সুবাদে দাসপ্রথার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। 'দ্য স্কট ট্রাস্ট লিগ্যাসিস অব এনস্লেভমেন্ট শিরোনামে' গতকাল ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়।
একই দিনে দাসবাণিজ্যের সঙ্গে গার্ডিয়ান প্রতিষ্ঠাতাদের সংযোগ থাকার বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তরমূলক আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান। বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে সে সময়ে দাসবাণিজ্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতাদের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সেখানে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
'স্কট ট্রাস্ট লিগ্যাসিস অফ এনস্লেভমেন্ট' প্রতিবেদনটি আসলে কী?
গার্ডিয়ানের মালিক সংস্থা স্কট ট্রাস্ট লিমিটেড পরিচালিত স্বাধীন একাডেমিক গবেষণার ফলাফলই হলো এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু।
১৮২১ সালে ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান প্রতিষ্ঠার সময় এডওয়ার্ড টেইলর এবং অর্থ সহায়তাকারী ১১ জনের ট্রান্সআটলান্টিক দাসত্বের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল কি-না এবং তাদের সে সময়ের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম কেমন ছিল, সে সম্পর্কে জানতেই ২০২০ সালে এ গবেষণা শুরু হয়।
গবেষণায় জন এডওয়ার্ড টেইলর সম্পর্কে কী জানা গেল?
ওকডেন অ্যান্ড টেইলর নামক তুলা উৎপাদন ফার্ম এবং শাটলওর্দ, টেইলর অ্যান্ড কো নামক তুলা বাণিজ্য কোম্পানির অংশীদার ছিলেন টেইলর। এ ফার্মের সুবাদে দাসবাণিজ্যের সঙ্গে তার একাধিক সংযোগ ছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় কোম্পানিটি আমেরিকায় দাসদের উৎপাদিত তুলা আমদানি করত।
গবেষণার মাধ্যমে কি দাসত্বের শিকার সেসব আফ্রিকানদের পরিচয় মিলেছে, যাদের শ্রমে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতারা?
গবেষণার তৃতীয় পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ও জ্যামাইকাতে প্ল্যান্টেশন বা আবাদের সঙ্গে জড়িত লোকদের কথা উঠে এসেছে। সেখানে গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে যুক্ত দাসত্বের শিকার কয়েকজন ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
উপকূলবর্তী দ্বীপপুঞ্জের তৎকালীন তুলাক্ষেতের সঙ্গে টেইলরের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ১৮৬২ সালে থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। সে সময়ে দাসত্বের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ৯০ বছর বয়সী টবি, ৫০ বছরের ক্লারিন্ডা, ৩৬ বছর বয়সী বিলি এবং ৭ বছরের ন্যান্সি। হিলটন হেড আইল্যান্ডের স্প্যানিশ ওয়েলস প্ল্যান্টেশনে দাসত্বের শিকার হয়েছিলেন তারা। এই কোম্পানির কাছ থেকে তুলা আমদানি করেছিল টেইলরের ফার্ম।
গার্ডিয়ানের ঘোষণাকৃত 'রিস্টোরেটিভ জাস্টিস' কী?
'রিস্টোরেটিভ জাস্টিস' বিষয়টিকে সহজ বাংলায় 'ক্ষতিপূরণ' হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এর মূল কথা হলো, কারো কোনো কাজের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ বা পুনরুদ্ধারের জন্য নতুনভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়াকে বোঝায়, যেমনটি নিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা।
এই প্রকল্পের আওতায় কী করা হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং জ্যামাইকার কমিউনিটি প্রোজেক্টগুলোকে আগামী ১০ বছর সহায়তা করবে গার্ডিয়ানের এই ক্ষতিপূরণ প্রকল্প তহবিল। এরমাধ্যমে ১৯ শতকে গার্ডিয়ানের প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে সংযোগ থাকা দাসত্বের শিকার লোকেদের বর্তমান বংশধরদের জন্যও সুনির্দিষ্টভাবে কয়েক মিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে।
প্রকল্পে কী পরিমাণ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গার্ডিয়ান?
স্কট ট্রাস্ট আগামী ১০ বছরে এই কর্মসূচিতে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও (১২.৩২ মিলিয়ন ডলার) বেশি ব্যয় করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ১২ মাসের মধ্যে উপকূলীয় দ্বীপপুঞ্জ ও জ্যামাইকার কমিউনিটি গ্রুপ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।