থেমে না থাকা এক মেয়র
প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেল চালিয়ে পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো ঘুরে দেখেন মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। সাইকেলের হাতলে ঝোলানো থাকে কয়েকটি ব্যাগ। সেখানে থাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক। রাস্তায় যাকে মাস্কবিহীন চলতে দেখেন তার হাতে ধরিয়ে দেন একটি করে মাস্ক। বিতরণ করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সাইকেল চালিয়ে চলে যান পৌরসভায়।
এভাবেই দিন শুরু করেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। স্থানীয়ভাবে তিনি জিপু চৌধুরী নামে পরিচিত। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এই মেয়র তরুণ বয়সেই রাজনীতিবিদ হিসেবে এরই মধ্যে পৌরবাসীর মন জয় করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, চলমান করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে শহরের অন্য ব্যক্তিদের সাধারণ মানুষ পাশে দেখা না গেলেও জিপু চৌধুরী একাই কাজ করে চলেছেন।
সকালে পৌরসভায় গিয়ে তিনি বেড়িয়ে পড়েন মশক নিধন অভিযানে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে গিয়ে নিজ হাতে স্প্রে করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকে জেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক কর্মী। এরপর তিনি পৌরসভায় ফিরে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যার পর শুরু করেন ত্রাণ বিতরণের কাজ। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ছিন্নমূল মানুষদের জন্য খাবার রান্না করে বিতরণ করেন মধ্যরাত পর্যন্ত।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) গভীর রাত পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণের পর পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সদর উপজেলা বেলগাছি গ্রামে দুই কৃষকের প্রায় তিন বিঘা জমির ধান কাটেন।
বেলগাছি গ্রামের কৃষক লাল্টু মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই জমির ধান পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলাম না। পৌর মেয়র তার লোকজন দিয়ে আমার দুই বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন। এখন ধানগুলো ঘরে তুলতে পারব।
জিপু চৌধুরী বলেন, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পৌরবাসীর জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। শহরে দুই বেলা ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটাই। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারনা চালাই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করি।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভেমরুল্লাহ পাড়ার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে মেয়র পৌরসভার লোকজন নিয়ে মশকনিধনে কাজ শুরু করেছেন।
''আগে মশার অনেক উপদ্রব ছিল। এখন তা কমে এসেছে। নিয়মিত পরিস্কার করলে মশা আরও কমে আসবে।''
পৌরসভার সূত্র জানায়, ওই এলাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত প্রায় ১৯ হাজার মানুষের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার মানুষের বাড়িতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
''কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেই। আমার একটাই উদ্দেশ্য। একটি মানুষও যেন না খেয়ে দিন না কাটায়',' বলেন জিপু চৌধুরী।
শহরে ভবঘুরে, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রতিদিন রাতে খাবার বিতরণ করা হয় জানিয়ে মেয়র বলেন, হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের স্বজনরা নিয়মিত খাবার নিয়ে আসতে পারে না। এ সব কথা চিন্তা করে মানুষগুলোর জন্য রান্না করা খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করি।
তিনি আরও বলেন, এ দুর্যোগের সময়ে মানুষের পাশে থাকতে পেরে আমি সার্থক। এই সময় যদি আমি ঘরে বসে থাকতাম তাহলে অসহায় মানুষগুলোর কী হতো। তাদের তো না খেয়ে দিন কাটাতে হতো।
''নিজের কথা কখনও চিন্তা করি না। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশ আমি পালন করে যাচ্ছি। ত্রাণ বিতরণে যেন অনিয়ম না হয় সেজন্য নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে আসছি'', যোগ করেন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হুছাইন জ্যাকি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জিপু চৌধুরী পুরো পৌর এলাকা ঘুরে মানুষের জন্য কাজ করেন। আমরাও তার সঙ্গে থাকি।
''উনি এভাবে কাজ না করলে অনেক ছিন্নমূল মানুষকে হয়ত না খেয়ে দিন কাটাতে হত'', যোগ করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পলাশপাড়ার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, পৌর মেয়র তালিকা করে নিজে উপস্থিত থেকে অসহায় মানুষের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। কাউকে ত্রাণ নিতে ছুটতে হচ্ছে না।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সি রেজাউল করিম খোকন বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি পৌরবাসীকে সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে তিনি প্রত্যেকটি ওয়ার্ড নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন এর জেলা শাখার সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য পৌরসভা থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি স্বচ্ছভাবে ত্রাণ বিতরণ করছে।
''দুর্যোগের এই সময় সাধারণ মানুষের পাশে যাদের থাকার কথা তাদেরকে খুব একটা দেখা না গেলেও জিপু চৌধুরী একাই মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। মেয়র তরুণ হওয়ায় তার কাজের গতি রয়েছে'', যোগ করেন তিনি।