এই গরমে তরমুজ প্রিয় যাদের, ৫ পুষ্টিগুণে ভরপুর বীজ ফেলে দেবেন না
তীব্র তাপদাহে তরমুজ খুবই তৃপ্তিদায়ক একটি ফল। স্বাদে মিষ্টি ও ভেতরে পানিতে ভরপুর ফলটির তাই গ্রীষ্মের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকে।
ফলটির ভেতরের লাল অংশ খাওয়া হলেও এতে থাকা বীজগুলো উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। তবে সূর্যমুখীর বীজের মতোই খাবার হিসেবে তরমুজের বীজের রয়েছে বহু পুষ্টিগুণ।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ফিচারভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হেলথ শর্টসের পক্ষ থেকে ভারতের দিল্লীর প্রিমাস সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান ইনচার্জ আনকিতা ঘোষাল বিশতের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি খাবার হিসেবে তরমুজের বীজের পাঁচটি উপকারের কথা বলেছেন।
হৃদপিণ্ডের উপকার
তরমুজের বীজে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। খনিজটি হৃদপিণ্ডের জন্য বেশ উপকারী। ম্যাগনেসিয়াম স্বাভাবিক রক্তচাপ ও স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বজায় রেখে হৃদপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য জিংক খুবই কার্যকরী। আর এই খনিজটি তরমুজের বীজে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই তরমুজের বীজ খাওয়ার ফলে দেহের জিংকের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে দেহের ইমিউন কোষ সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।
হজমে উপকারী
তরমুজের বীজের মধ্যে ফাইবার ও অসম্পৃক্ত ফ্যাট রয়েছে। এগুলো দেহের হজমের জন্য খুবই উপকারী। যার ফলে তরমুজের বীজ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে দেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে মলত্যাগে সহযোগিতা করে।
ত্বক ও চুলের উপকার
ত্বক ও চুলের যত্নে অনেকেই তরমুজের খোসা ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই পদ্ধতি ততটা কার্যকরী নয়। বরং এরচেয়ে তরমুজের বীজ খবার হিসেবে বেশি উপকারী।
তরমুজের বীজ প্রোটিন ও ফ্যাটি এসিডে ভরপুর। দেহে এগুলোর উপস্থিতি ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একইসাথে বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বকের প্রদাহ ও ব্রণ প্রতিরোধেও কার্যকরী।
হাড়ের উপকার
দেহে শক্ত ও স্বাস্থ্যবান হাড়ের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তরমুজের বীজে এই খনিজটিও রয়েছে। এক্ষেত্রে তরমুজের বীজ খাবার হিসেবে গ্রহণের ফলে হাড়ের উপকারের পাশাপাশি পেশি ও স্নায়ু সচল রাখতেও সহায়তা করে এটি।
তরমুজের বীজ কীভাবে খাবেন?
বীজ আলাদা করে প্রথমে চুলার তাপে ভাজতে হবে। এরপর লবণ কিংবা অন্য যে কোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে স্বাদ বৃদ্ধি করে তা খাওয়া যাবে।
এ সম্পর্কে বিশত বলেন, "তরমুজের বীজে ভিটামিন, ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন ইত্যাদি থাকায় আপনি চাইলে প্রতিনিয়তই খাবারটি খেতে পারবেন। তবে এতে উচ্চ ক্যালরি থাকায় অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়।"
বিশত জানান, দৈনিক ৩০ গ্রাম কিংবা কাপের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণে বীজ খাওয়া যেতে পারে। তবে এটিতে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকায় যাদের পাকস্থলীতে সমস্যা রয়েছে, তাদের না খাওয়াই উত্তম।
তবে, দেহের জন্য উপকারী হলেও ক্ষেত্রবিশেষে তরমুজের বীজ খাবার হিসেবে উল্টো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের এ বীজ খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
ডায়ালাইসিসের রোগী কিংবা কিডনি সংক্রান্ত জটিলতার ভুগতে থাকা ব্যক্তিদেরও তরমুজের বীজ খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে থাকা উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম কিডনীর সমস্যা বাড়াতে পারে।
বেশিরভাগ মানুষের জন্যই তরমুজের বীজ হতে পারে একটি পুষ্টিকর উপকারী খাবার। তবে শরীরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা থাকলে এটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।