স্বস্তির ঈদযাত্রায় অস্বস্তি বাড়তি বাসভাড়া
'ময়মনসিং ৫০০, ময়মনসিং ৫০০।'
ময়মনসিংহের যাত্রীদের মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে এভাবেই ডাকছিলেন সৌখিন পরিবহনের সুপারভাইজার হানিফ।
পাশেই দাঁড়ানো আলম এশিয়া, বিনিময়, ইমামসহ বেশ কয়েকটি বাসের কর্মীদেরও ৫০০ টাকায় যাত্রী ওঠাতে হাঁকডাক করতে দেখা যায়।
সড়ক, রেল ও নৌপথে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির পরিমাণ কমে আসায় এবার অনেকটা স্বস্তিতেই রাজধানী ছাড়ছেন অধিকাংশ মানুষ। তবে এসবের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করছে বাসের বাড়তি ভাড়া।
মহাখালী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, গাবতলী, গুলিস্তানসহ দূরপাল্লার টার্মিনালগুলোতে বাড়তি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের মাসকান্দা স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরত্বের নির্ধারিত ভাড়া ৩২০ টাকা। ঈদযাত্রীর চাপকে পুঁজি করে ১৭০ টাকা করে বাড়তি ভাড়া রাখছে পরিবহন কোম্পানিগুলো।
মহাখালী বাস কাউন্টারে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি এলাকার সফিউল্লাহ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে পরিবারের চার সদস্যের বাড়ি যেতে ১,২০০ টাকা বাস ভাড়াসহ খরচ পড়ে ১৪০০ টাকা। এবার কেবল বাস ভাড়াই লাগছে ২,০০০ টাকা।
শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, গ্রীনলাইন, সেন্টমার্টিন, নাবিলসহ অধিকাংশ ব্র্যান্ডেড কোম্পানির টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টারে কোনো টিকিটই পাওয়া যাচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বল্প-পরিচিত বাসগুলোর টিকিট বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অবশ্য কিছু ব্র্যান্ডেড বাসের কাউন্টারেও বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
সায়েদাবাদ থেকে বরিশালের স্বাভাবিক সময়ে নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার ভোরে এ রুটের হানিফ, শ্যামলী, সাকুরা, বিএমএফ, গোল্ডেন লাইনসহ অধিকাংশ বাসেই ৭০০-৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
হানিফের ৬ নম্বর কাউন্টার থেকে বরিশালগামী দুইজন যাত্রীর জন্য ১,৬০০ টাকা ভাড়ার টিকিটে টাকার অঙ্ক লেখা হয়নি। বাড়তি ভাড়া রাখার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, 'এ সময়ে ভাড়া এটাই। ভালো না লাগলে যাবেন না। যাত্রীর অভাব নেই।'
টিকিটে ভাড়া লিখে দেওয়ার কথা বলা হলেও তা করেননি কাউন্টারের দায়িত্বরতরা।
সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ৫৪০ টাকার ভাড়া একুশে এক্সপ্রেস পরিবহনে রাখা হচ্ছে ৬০০ টাকা। ৬০ টাকা বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টারে দায়িত্বরত মাস্টার আলম জানান, 'এটা মালিকের সিদ্ধান্ত। আমাদের কিছুই করার নেই।'
শাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে টানানো তালিকায় বরিশালের ভাড়া ৫০০ টাকা লেখা থাকলেও ২০ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। আর পাশেই জুবায়ের পরিবহনের কাউন্টারে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা।
বাড়তি দাম চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে জুবায়ের পরিবহনের দায়িত্বরত এক কর্মী বলেন, 'আমাদের বাসগুলো কুয়াকাটা পর্যন্ত যায়। এ কারণে ভাড়ার পরিমাণ একটু বেশি।'
বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেহারুল ইসলাম বলেন, 'বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'
বিআরটিএ'র দফতরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে স্থাপন করা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ এলেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কাউন্টারকে জরিমানা করা হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি। সাংবাদিক বন্ধুরা এমন অভিযোগ পেলে আমাদের জানাবেন। যাত্রীদের যাত্রা সুগম করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।'