নিজে না খেয়ে তামিমের জন্য টাকা জমাতেন নাফিস
তামিম ইকবালের বয়স তখন ১১। সে সেময় মারা যান তার বাবা ইকবাল খান। দুই সন্তানকে নিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যান তামিম ইকবালের মা। পরিবারের দুঃসময় বুঝতে সময় নেননি তামিমের বড় ভাই ও বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। ১৫ বছর বয়সেই সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নেন তিনি।
নিজের পেটে কিছু পড়ুক আর না পড়ুক, সংসার ও ছোট ভাই তামিমের চিন্তা সব সময় মাথায় থাকতো নাফিসের। নিজে কম খেয়ে তামিমের জন্য টাকা জমাতেন বাংলাদেশের হয়ে ১১ টেস্ট ও ১৬টি ওয়ানডে খেলা নাফিস। এসব তামিম বা নাফিসের মুখের কথা নয়, জানিয়েছেন নাফিসের বন্ধু মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে লম্বা সময় ধরে আড্ডা দেন তামিম ইকবাল। সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক ও বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়কের এই আড্ডায় অনেক বিষয়ের সঙ্গে উঠে আসে তামিম ইকবালের ছোট বেলার গল্পও।
তামিম-নাফিসের বাবা ইকবাল খান চট্টগ্রামের জনপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন। ফুটবল ও ক্রিকেট; দুই খেলাতেই সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম লিগে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেন তামিমের বাবা। ফুটবলে চট্টগ্রামসহ ঢাকার প্রথম বিভাগে খেলেছেন ইকবাল খান।
খেলা ছাড়ার পর কোচ, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও চট্টগ্রামে কাজ করেছেন তিনি। ২০০০ সালে তিনি মারা গেলে সংসারের হাল ধরেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে তিন বছর খেলা নাফিস। সে সময় তামিমকে আগলে রাখতে নিজের শখ-আহ্লাদ; সব জলাঞ্জলি দেন নাফিস।
ফেসবুক লাইভে আড্ডার এক ফাঁকে মাশরাফিকে তামিম প্রশ্ন করেন, 'আপনি আমাকে প্রথম কবে দেখেছিলেন? মনে আছে?' তামিমের এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটুও সময় নিতে হয়নি মাশরাফিকে।
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলে ওঠেন, 'তোর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা, তুই হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা ছিলি। আমি আর তোর ভাই নাফিস (ইকবাল) তো বন্ধু, চট্টগ্রামে টেস্ট ম্যাচের সময় তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম। দেখলাম তুই আরও দুই-তিনজন বন্ধুর সঙ্গে গাড়ি নিয়ে খেলছিস। আমার-তোর বাচ্চারা এখন যেমন খেলে গাড়ি নিয়ে।'
ছোট্ট তামিমের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, সেটাও স্পষ্ট মনে আছে মাশরাফির। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশকে পথ দেখানো এই ক্রিকেটার বলেন, 'আমি বললাম, 'ভাইয়া তুমি ভালো আছো?', তুই বললি, 'জ্বী ভাইয়া', সেটা বলতেও লজ্জা পাচ্ছিলি। সেই তামিম এখন বাংলাদেশের অধিনায়ক, দেখতে ভালোই লাগে।'
নাফিসের প্রসঙ্গ উঠে আসায় তামিমকে মাশরাফি মনে করিয়ে দেন, তার ক্যারিয়ারে নাফিসের কতটা অবদান। মাশরাফি বলেন, 'একটা কথা বলি, তোর আজকে এই পর্যায়ে আসার পেছনে তোর ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তোর বাবা অন্যরকম মানুষ ছিলেন। তোর মা, চাচারা, যে যেটাই বলুক, তোর ভাইকে তো আমি কাছ থেকে দেখেছি, নাফিস তোর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা অবিশ্বাস্য।'
তামিমের জন্য নাফিসের লড়াইটা কেমন ছিল, সেটা জানিয়ে মাশরাফি বলেন, 'বাবা মারা যাওয়ার পর তোর মা সংসার সামলেছে। কিন্তু তোর জন্য তোর ভাই যা করেছে, আমরা জানি। মনে আছে, এক পেন্সের বার্গার খেত নাফিস। আমি একদিন ওকে বলেছিলাম, 'তুই যদি শরীরে না দিস (যথেষ্ট খাবার), তাহলে বাঁচবি কীভাবে আর খেলবি কীভাবে।' পরে বুঝেছি, ও আসলে তোর জন্যই সব করত। টাকা বাঁচাত তোর জন্য, তুই যেন একটা ভালো ব্যাট দিয়ে খেলতে পারিস।'
মাশরাফি যেন প্রজন্মের মেলবন্ধন। তামিম ইকবালের কাকা আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, এনামুল হক মনিদের সঙ্গে খেলেছেন মাশরাফি। তামিম ইকবালের বড় ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। তামিম ইকবালের সঙ্গেও দীর্ঘ সময় ধরে খেলে যাচ্ছেন মাশরাফি। নাফিস ছিল বন্ধু। তামিম বয়সে ছোট হলেও দীর্ঘ সময় একই পথের পথিক হওয়ায় তার সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে মাশরাফির।