আমেরিকা ইরানের তেলের কার্গো জাহাজ জব্দ করার পর পাল্টা জব্দ করল ইরান
তিনটি সূত্র অনুযায়ী, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের অভিযান হিসেবে সমুদ্রে একটি ট্যাঙ্কারে থাকা ইরানের তেল জব্দ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে এক সমুদ্র নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রানুযায়ী, এর কয়েকদিন পরেই প্রতিশোধ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি তেল বোঝাই ট্যাঙ্কার জব্দ করেছে ইরান। খবর রয়টার্সের।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের ওপর কয়েক বছর ধরে চলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শেষ বড় ঘটনা এই কার্গো জব্দকরণ। এদিকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করে না এবং ক্রমাগত তাদের তেল রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে।
তেহরানের দাবি অনুযায়ী, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সন্দেহ ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়।
এদিকে মেরিটাইম সিকিউরিটি কোম্পানি অ্যামব্রের সূত্রানুযায়ী গত বৃহস্পতিবার ইরানের পদক্ষেপের অন্তত পাঁচ দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কার্গো জব্দ করেছিল। ইরানের নৌবাহিনী তাদের কার্গো জব্দ করার প্রতিশোধ হিসেবেই এ কাজ করেছে বলে জানা গিয়েছে।
"দুটি ট্যাঙ্কারই ছিল সুয়েজম্যাক্স আকারের। ইরান এর আগেও কার্গো জব্দ করার জবাব কার্গো জব্দ করেই দিয়েছে।"
সূত্রগুলো এই ঘটনার সংবেদনশীলতার কারণে তাদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, আদালতের আদেশের পর মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে থাকা ট্যাঙ্কার সুয়েজ রাজানে থাকা তেলের কার্গোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে জাহাজের ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, ট্যাঙ্কারের সর্বশেষ রিপোর্ট করা অবস্থান ছিল আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে।
এদিকে জাহাজটির দায়িত্বে থাকা গ্রিস-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এম্পায়ার নেভিগেশন এবং মার্কিন বিচার বিভাগ এ ব্যাপারে মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
মার্কিন নৌবাহিনীর মতে, গত বৃহস্পতিবার ওমান উপসাগরে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী ট্যাঙ্কার আটক করেছে ইরান, যেটি সংঘাতময় উপসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর তেহরানের সর্বশেষ জব্দকরণের ঘটনা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি গত শুক্রবার জানিয়েছে যে, ট্যাঙ্কারটি একটি ইরানি নৌকার সাথে সংঘর্ষের পরে আট ঘন্টা রেডিও কল উপেক্ষা করেছিল। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ক্রু আহত এবং তিনজন নিখোঁজ হয়। ইরানের ডেপুটি নেভি কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মোস্তফা তাজোদিনি গণমাধ্যমে প্রচার করেন, "বল প্রয়োগের আগে আমরা জাহাজটিকে থামার জন্য ডাকলেও তারা সে ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করেনি।"
এদিকে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ওমান উপসাগরে মার্কিন কার্গো জব্দ সম্পর্কে অবগত আছেন এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী এ ঘটনা যাচাই করা হবে বলে নিশ্চিত করেন।
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিসের কাছে ইরানের তেলের একটি কার্গো জব্দ করার চেষ্টা করেছিল, যা তেহরানকে উপসাগরীয় অঞ্চলে দুটো গ্রিক ট্যাঙ্কার জব্দ করতে প্ররোচিত করেছিল। গ্রিসের সর্বোচ্চ আদালত কার্গোটি ইরানে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর দুটি গ্রিক ট্যাঙ্কারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
২০২০ সালেও যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার উদ্দেশ্যে যাওয়া বিদেশি জাহাজে ইরানের চারটি কার্গো জব্দ করে এবং অজ্ঞাত বিদেশী পার্টনারদের সহায়তায় কার্গোগুলোকে অন্য দুই জাহাজে স্থানান্তরিত করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।