চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা: ২১ খাল ভোগাবে নগরবাসীকে!
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে আগামী জুন মাসে। তবে নগরীর ৫৭ খালের মধ্যে ৩৬টির কাজ চলছে এই প্রকল্পের অধীনে। বাকি ২১টি খালের সমস্যা নগরবাসীকে ভোগাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান।
মঙ্গলবার (২ মে) বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪-ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সভায় প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী প্রকল্পের সম্পন্ন হওয়া কাজ এবং অবশিষ্ট কাজের বিস্তারিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। ৩৪-ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ সেনাবাহিনী ও সিডিএ'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান বলেন, '৫৭টি খালের মধ্যে আমাদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩৬টি। আমরা ৩৬টি খালের কাজই প্রায় শেষ করেছি। কিন্তু বাকি ২১টি খালের পানি সরার পথ নেই। এসব খাল এবং ৫৯টি পয়েন্টের ব্রিজ, কালভার্টে বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাসের লাইনে ময়লা জমে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে প্রকল্পের বাইরে রাখা এসব খাল ও ব্রিজ নগরবাসীকে সামনের দিনে ভোগাবে।'
প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, জোয়ার-ভাটার পানি নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মহেশখাল, ফিরিঙ্গি বাজার, টেকপাড়া, কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খালে পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩২টি এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১২টির কাজ করছে। সেনাবাহিনীর এই প্রকল্পে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কথা ছিল। রিটেইনিং ওয়াল রেলিংসহ সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে ১১৮ কিলোমিটার। আর বাকি অংশে রেলিংসহ ফিনিশিং ওয়ার্ক বাকি আছে বলে জানানো হয়। ৪৫টি ব্রিজের মধ্যে সবকটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন। অন্যান্য ব্রিজ ও কালভার্টে গ্যাস লাইন, ওয়াসার লাইন, বিটিসিএল'র লাইন আছে। যাতে বৃষ্টির পানির সাথে আবর্জনা গিয়ে আটকে থাকে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর নির্মিত ব্রিজ ও কালভার্টে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই সংযোগের পাইপ নেই। ফলে এসব ব্রিজ কালভার্টে পানি আটকে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রকল্পে রোড সাইড ড্রেনের পরিকল্পনা ছিল ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। তা সম্পূর্ণ নির্মাণ হয়েছে। নতুন ড্রেন নির্মাণের কথা ছিল ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার, তাও সম্পন্ন হয়েছে। তবে সিল্ট ট্র্যাপ ৪২টির মধ্যে ১৩টি, খালপাড়ে রাস্তা নির্মাণ ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ফুটপাত ৫০ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নির্মাণ সম্পন্ন।
প্রকল্পের সুফল পেতে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। তিনি বলেন, 'জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ দিকে। জলাবদ্ধতার ভোগান্তির দিন শেষ না হলেও ভোগান্তি কমে আসবে। এই প্রকল্পের সুফল পেতে হলে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।'
সাংবাদিকরা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় এই ২১টি খাল কেন প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে তা জানতে চাইলেও সিডিএ চেয়ারম্যান তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে 'চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন' প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। গত বছর এর ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করা হয়।