গঙ্গায় পদক ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখলেন ভারতীয় কুস্তিগীররা
ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজ ভূষণ শরণের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন করছেন ভারতীয় কুস্তিগীররা। টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ আন্দোলন চলমান থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই প্রতিবাদস্বরূপ কুস্তিগীররা তাদের অর্জিত অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমসের পদক গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে তাদের পদক ফেলে দেওয়ার কথা থাকলেও, সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পাঁচ দিন সময় দিয়েছেন তারা। খবর বিবিসির।
পদক গঙ্গায় ফেলে দিতে চাওয়া কুস্তিগীরদের মধ্যে সাক্ষী মালিক, বাজরাং পুনিয়া ও ভিনেশ ফোগাটের মতো দেশসেরা কুস্তিগীরদের নামও উঠে এসেছে। দাবি পূরণ না হলে, ইন্ডিয়া গেট-এ অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনেও যাওয়ার পরিকল্পনাও করছেন তারা।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কুস্তিগীররা বলেন, "এই মেডেলগুলো আমাদের জানপ্রাণ ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমাদের গলার থাকা পদকগুলোর আর কোনো অর্থ নেই।"
গত রোববার কুস্তিগীররা তাদের প্রতিবাদের অংশ হিসাবে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে, সাক্ষী, পুনিয়া ও ফোগাটসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ তাদের থামিয়ে ওই এলাকা থেকে বাসে করে নিয়ে যায়। নরেন্দ্র মোদির উদ্বোধন করা নতুন সংসদ থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে ঘটনাটি ঘটে।
ক্রীড়াবিদদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া এবং বাসে উঠানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদরা এ ঘটনার সমালোচনা করেছেন।
মঙ্গলবার কুস্তিগীররা তাদের বিবৃতিতে পুলিশের এমন পদক্ষেপের নিন্দা করে জানান, 'অপরাধী'দের সাথে যেমন আচরণ করা হয়, তাদের সাথেও তেমন আচরণ করা হয়েছে।
তাদের প্রশ্ন, 'নারী ক্রীড়াবিদরা কি তাদের সঙ্গে হওয়া যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে কোনো অপরাধ করেছেন?'
প্রসঙ্গত, ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজ ভূষণ দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ ও আইনপ্রণেতা। গত ২৩ এপ্রিল থেকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন ক্রীড়াবিদরা। যদিও ব্রিজ ভূষণ তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভারতে পদক ফেলে দেওয়ার হুমকির ঘটনা অনেকটা নতুন হলেও, বিশ্বজুড়ে সামাজিক নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ বহু খেলোয়াড়ই এমনটা করেছেন। এর মধ্যে কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলীর ঘটনাটি সবচেয়ে বিখ্যাত।
মোহাম্মদ আলী ক্যারিয়ারের মোট ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই জিতেছেন। হেরেছেন মাত্র পাঁচটি! ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৩৭টি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করে জিতেছেন।
কিন্তু সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও বর্ণবাদ যেন পিছু ছাড়েনি বিশ্ববিখ্যাত এ বক্সারের। অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতে দেশে ফেরার পর শুধু কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে একটি রেস্টুরেন্টে মোহাম্মদ আলীকে খাবার পরিবেশন করা হয়নি। কেননা ঐ রেস্টুরেন্টটি শুধু শ্বেতাঙ্গদের খাবার পরিবেশন করতো।
এমনকি বর্ণবাদের শিকার হয়ে একটি মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের সাথে রাস্তায় মারামারিতেও জড়িয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। কিংবদন্তি এ বক্সার তার আত্মজীবনীমূলক বই 'দ্য গ্রেটেস্ট' এ জানান, মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের সাথে ঐ মারামারির পর ক্ষোভে ওহাইও নদীতে অলিম্পিকের স্বর্ণপদকটি ফেলে দেন তিনি।
যদিও প্রকৃতপক্ষেই আলী পদকটি নদীতে ফেলেছিলেন কি-না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা 'মোহাম্মদ আলী: হিজ লাইফ অ্যান্ড টাইমস' বইয়ের লেখক থমাস হাউজার বলেন, "মোহাম্মদ আলী পদকটি হারিয়ে ফেলেছিলেন।"