এডিবি, এআইআইবি থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ
চলতি মাসেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর কাছ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালীন সময়ে এই বাজেট সহায়তা আমদানির বিল মেটাতে ও দেশের ব্যবসা পরিস্থিতিতে স্থিরতা আনতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এডিবি এবং চীনের নেতৃত্বাধীন এআইআইবি উভয়েই এই আর্থিক সহায়তায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার করে অবদান রাখবে।
এই দুই সংস্থার ছাড়াও, চলতি মাসে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর সঙ্গে ইয়েনে প্রায় ২৩০ মিলিয়নের আরও একটি বাজেট সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইআরডি সূত্র।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, জাইকার সঙ্গে আগামী সপ্তাহেই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
ইআরডি সূত্রে জানান গেছে, বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা প্রস্তাব আজ (১৩ মে)) এশীয় উন্নয়ন বোর্ড (এডিবি)-এর বোর্ড সভায় উঠবে। আগামী কাল (১৪ মে) এডিবির সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এডিবির নেতৃত্বে এই বাজেট সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে এডিবির সঙ্গে চুক্তির হওয়ার পর দিনই এআইআইবির সঙ্গে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
নিয়ম অনুযায়ী, এআইআইবির বাজেট সহায়তা প্রস্তাব তাদের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করতে হবে না। তবে এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে বোর্ড সদস্যাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সদস্যদের কাছে অনাপত্তি পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।
সাধারণত ঋণ চুক্তির পর পরই বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় হয়ে যায়। ফলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় হবে।
এই দুই সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বাজার ভিত্তিক সুদ হারে। ফলে একটু উচ্চ সুদে এই ঋণ নিতে হবে।
তবে সংশ্লিষ্টারা বলছেন, সুদহার বেশি হলেও ডলার সংকটের কারণে বর্তমানে দেশে বাজেট সহায়তা প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজেট সহায়তার এই চুক্তি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাজেট সহায়তার ক্ষেত্রে সুদের এই হার তুলনামূলকভাবে কম। তিনি আরও বলেন, কয়লা ও এলএনজি আমদানির জন্য বাংলাদেশের পক্ষে অন্যকোনো বাণিজ্যিক উৎস থেকে এত অনুকূল হারে ঋণ নেওয়া সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ'র ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আগামী জুনের শেষে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকতে হবে। এছাড়া, সেপ্টেম্বরে থাকতে হবে ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার।
আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ'র দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় হবে। এ কারণে এডিবি ও এআইআইবির এই বাজেট সহায়তা রিজার্ভ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমানে দ্য সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিয়াল রেট (এসওএফআর) ৫ শতাংশের ওপরে। এডিবির বাজেট সহায়তার সুদহার হবে এসওএফআর +০.৫ শতাংশ এবং এরসঙ্গে কমিমেন্ট ফি থাকবে ০.১৫ শতাংশ। ৩ বছরের বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ এই ঋণ ১৫ বছরে শোধ করতে হবে।
অন্যদিকে, এআইআইবির ঋণের সুদহার এসওএফআর'র সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিষয়গুলোর (ভেরিয়েবল স্প্রেড) ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে। এছাড়া, কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে ০.২৫ শতাংশ এবং ফ্রন্ট এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ। ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২৬ বছর।
চলতি অর্থবছরে এডিবি ও জাইকার কাছ থেকে প্রথমবারের মতো বাজেট সহায়তা পেলেও এআইআইবি চলতি অর্থবছরে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে।
এছাড়া, গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেয় বাংলাদেশকে। এরমধ্যে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার ছিল সুদ ও চার্জ মুক্ত ঋণ। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে এই ঋণ শোধ করতে হবে। বাকি ১৭৬ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার সুদ হার ১.২৫ শতাংশ, সার্ভিস চার্জ ০.৭৫ শতাংশ এবং কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে ০.৫০ শতাংশ হারে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কোভিড-১৯ এর টিকা কেনার অর্থসহ বাজেট সহায়তা পেয়েছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট সহায়তা ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ডলার।