আফগানদের গুঁড়িয়ে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের
চার বছর কতোটা সময়? এই সময়ের ব্যবধানে কতোটা পার্থক্য? আফগানিস্তান ক্রিকেট দল নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছে। ২০১৯ সালের সেই ম্যাচে আড়াই দিন বৃষ্টি হওয়ার পরও রশিদ খানের স্পিন ভেল্কিতে বড় ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিল টেস্ট আঙিনার নবীনতম দলটি। সেই দলটিই এবার স্রেফ উড়ে গেল কোনো রকম লড়াই করা ছাড়াই। প্রায় প্রতিটা মুহূর্ত ব্যাটে-বলে শাসন করে চারদিনেই রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রানের হিসাবে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় জয়। নিজেদের প্রথম টেস্ট জয়ের সেই জয়টি এতোদিন বড় জয় ছিল তাদের, ২২৬ রানে জিতেছিল তারা।
বিশাল জয়ে সব মিলিয়ে আরেকটি দারুণ রেকর্ডে নাম তুলেছে বাংলাদেশ। রানের হিসাবে টেস্ট ইতিহাসের ১৪৬ বছরে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়। ১১২ বছর ধরে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ১৯১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৩০ রানে হারিয়েছিল তারা। অজিদের সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে তিন নম্বরে নিজেদের নামটি খোদাই করে নিলো বাংলাদেশ। এই শতাব্দীতে ৫০০ রানরে জয়ের কোনো রেকর্ড ছিল না।
অধিনায়ক হসেবে শুরুটা ঝলমলে হলো লিটন কুমার দাসের। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টি এলো তার নেতৃত্বে, দারুণ এক রেকর্ডে তার নাম বসলো মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের পাশে। দেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই জয়ের স্বাদ পেলেন লিটন।
বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ২০০৯ সালে নিজের প্রথম টেস্ট জেতেন মাশরাফি, যদিও সেই ম্যাচে চোট পাওয়ার কারণে পরে নেতৃত্ব দেন সাকিব। অধিনায়ক হিসেবে পরের ম্যাচে অভিষেক হওয়া সাকিবও নিজের প্রথম ম্যাচ জেতেন। এর বাইরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কেবল ড্র করতে পেরেছেন, বাকি সব অধিনায়কের সঙ্গী হয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান তোলে। ম্যাচসেরা নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪৬, মাহমুদুল হাসান জয় ৭৬ ও মুশফিকুর রহিম ৪৭ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮ রান করেন। আফগানরা প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়, ২৩৬ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে ফলো-অন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে রাজত্ব করে বাংলাদেশ। আফগান বোলারদের কোণঠাসা করে রান পাহাড় গড়ে ঘরের মাঠের দলটি। ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করলে আফগানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৬২। যা নিজেদের ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্য এবং টেস্ট ইতিহাসের অষ্টম সর্বোচ্চ।
রান পাহাড় পাড়ি দিতে নেমে তাসকিন-শরিফুলদের বোলিং তোপে ১১৫ রানেই দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় আফগানিস্তানের। দলটির মাত্র তিনজন দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৬১ রান করেছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো প্রতিপক্ষের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২ উইকেটে ৪৫ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে আফগানিস্তান। দলের বাজে সময়ের মধ্যে হাশমতউল্লাহ শহিদিকে নিয়েও চিন্তায় থাকতে হয় সফরকারীদের। তাসকিন আহমেদের একটি ডেলিভারি নিচু হয়ে ছাড়তে গিয়ে মাথায় বলের আঘাত পান আফগান অধিনায়ক। সে সময় মাঠ ছাড়া হাশমতউল্লাহ পরে আর ব্যাটিং করেননি, চতুর্থ দিন কনকাশন সাব হিসেবে খেলেন বাহির শাহ।
চতুর্থ দিন শুরুতেই আফগান শিবিরে আঘাত হানেন এবাদতে হোসেন, তার শিকার নাসির জামাল। এরপর তাসকিন, শরিফুলদের তোপে দিক হারিয়ে বসা আফগানিস্তান ৭০ রানের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট খুইয়ে হার মেনে নেয়। একটি উইকেট অবশ্য নেওয়া হয়নি বাংলাদেশের, আফগানদের শেষ ব্যাটসম্যান জহির খান বলের আঘাতে মাঠ ছাড়েন।
আফগানিস্তানের রহমত শাহ সর্বোচ্চ ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া হাশমতউল্লাহ ১৩ ও করিম জানাত ১৮ রান করেন। বাকিদের কেউ ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। ৯ ওভারে ৩৭ রানে তাসকিন সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। ১০ ওভারে ২৮ রান খরচায় শরিফুলের শিকার ৩টি উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ও এবাদতে হোসেন একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৪২৫/৪, ডিক্লে.
আফগানিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৬৬২), ৩৩ ওভারে ১১৫ (রহমত ৩০, হাশমতউল্লাহ ১৩, করিম ১৮; তাসকিন ৪/৩৭, শরিফুল ৩/২৮, মিরাজ ১/৫, এবাদত ১/২২)।
ফল: বাংলাদেশ ৫৪৬ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: নাজমুল হোসেন শান্ত (বাংলাদেশ)
সিরিজ: বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে জয়ী