মস্কোর কাছাকাছি ওয়াগনার, ‘বিদ্রোহ’ দমানোর অঙ্গীকার পুতিনের
হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের পরও অগ্রগতি থামেনি বিদ্রোহী রাশিয়ান ভাড়াটে যোদ্ধাদের। রোস্তভ শহর দখলের পর মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপ। এখনো পর্যন্ত তাদেরকে বড় কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
এর আগে শনিবার (২৪ জুন) রাশিয়ার সেনাবাহিনীর একাধিক হেলিকপ্টার ওয়াগনার গ্রুপের সেনাবহর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে।
মস্কো থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে এলেটস শহরে ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বাহিনীর সামরকি বহরকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এদিকে জানা গেছে, চেচেন আখমাত ব্রিগেড রোস্তভের পথে আছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে একাধিক সাঁজোয়া যান এবং সেনাদের বহনকারী ট্রাক ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা শহরটির উপকণ্ঠে চলতে দেখা যায়।
নিজের ২৩ বছরের শাসনকালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিদ্রোহ দমনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এটি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে 'একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটনের' অভিযোগ আনছে।
পুতিনের সাবেক মিত্র প্রিগোজিনে নেতৃত্বাধীন ওয়াগনার গ্রুপ রোস্তভ দখলের পর তারা মস্কোগামী এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ধরে এগোচ্ছে।
দলটি রোস্তভ ও মস্কোর মাঝামাঝি অবস্থিত ভোরোনেজ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ে রুশ সেনাবাহিনী।
কিন্তু মহাসড়কে বিদ্রোহীদের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। রাশিয়ান গণমাধ্যম মস্কোর দক্ষিণ উপকণ্ঠে পুলিশের একটি ছোট দলের মেশিনগান নিয়ে অবস্থান করার ছবি প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া রাজধানীর দক্ষিণে লিপেটস্ক অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু এ পরিস্থিতির জন্য পুতিন যেন পশ্চিমাদের ওপর কোনো দোষ চাপাতে না পারেন, তাই জনসমক্ষে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি মার্কিন কর্মকর্তারা।
ভোরোনেজের একটি জ্বালানি ডিপোতে আগুন লেগেছে। সেখানে শতাধিক দমকলকর্মীকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। রয়টার্স-এর কাছে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের পর আগুন লেগেছে সেখানে।
ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন তার বাহিনীকে থামানোর চেষ্টাকালে আকাশ থেকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলেছেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে।
ওয়াগনার গ্রুপ মস্কোর দিকে এগোতে শুরু করার পড় মস্কোজুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর অনেক জায়গায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে।
বিবিসি'র সংবাদে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত মস্কো এলাকায় ঘরের বাইরে যেকোনো ধরনের গণসমাবেশ, অনুষ্ঠান ইত্যাদি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে মস্কোর মেয়র নাগরিকদেরকে শহরে না বেরোতো আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তার লোকজন 'বিচারের জন্য অগ্রসর হচ্ছে' বলে মন্তব্য করে প্রিগোজিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য কমান্ডারদের অপসারণ করা হবে।
এদিকে ক্রেমলিন থেকে এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য, হাজার বছরের ইতিহাসের একটি রাষ্ট্র রাশিয়ায় থাকার অধিকারের জন্য লড়াই করছি।'
'যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্বাসঘাতকতার পথে পা দিয়েছে... যারা ব্ল্যাকমেইল এবং সন্ত্রাসী পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, তাদের শাস্তি অনিবার্য,' বলেন তিনি।
ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন দ্রুত পুতিনের বক্তব্যের জবাব দিয়ে বলেন, তার এবং বাহিনীর সদস্যদের এসবে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না।
প্রিগোজিন একটি অডিও বার্তায় বলেন, 'রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলে প্রেসিডেন্ট ভুল করেছেন। আমরা দেশপ্রেমিক। আমরা দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং লড়াই করছি। আমরা চাই না দেশ দুর্নীতি আর প্রতারণার মধ্যে থাকুক।
এর আগে প্রিগোজিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে রোস্তভ-এ যাওয়ার দাবি জানান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়েছিল ওয়াগনার বাহিনী। গত তিন মাস ধরে ক্রেমলিনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় এটি। অস্ত্র সরবরাহে অবহেলা নিয়ে বারবার অভিযোগে তোলে দলটি।