উচ্চ রক্তচাপ কেউ চায় না, হলে কম রাখার উপায় কী (তবে খুব কমেও যাতে না যায়)
রক্তচাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন খুব একটা সহজ নয়। উচ্চ রক্তচাপ কিংবা নিন্ম রক্তচাপ দেহের জন্য ক্ষতিকর, এটা প্রায় সকলের কাছেই জানা। কিন্তু এই রক্তচাপ বলতে আসলে কীভাবে হয় সেটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়।
এ সম্পর্কে ইন্টারমাউন্টেন হেলথের সহযোগী অধ্যাপক ভিয়েট লে বলেন, "হৃদপিণ্ড থেকে দেহের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গে রক্ত চলাচলের জন্য যে চাপ সৃষ্টি হয়, সাধারণত সেটার পরিমাপই রক্তচাপ।"
রক্তচাপ মূলত দুটি পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। একটি হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিমাপ; যেটিকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বলে। আরেকটি হচ্ছে সর্বনিন্ম পরিমাপ; যেটিকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে।
সিস্টোলিক রক্তচাপ সম্পর্কে ইউম্যাস চ্যান মেডিক্যাল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক বারবারা ওলেনডজকি বলেন, "সিস্টোলিক রক্তচাপ বলতে আর্টারিতে হৃদপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার ফলে সৃষ্ট চাপকে বোঝায়। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয় এবং এর ফলে সর্বোচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয়।"
অন্যদিকে ডায়াস্টোলিক চাপ সম্পর্কে ওলেনডজকি বলেন, "হৃদপিণ্ড হৃদস্পন্দনের সময় যখন প্রসারিত অবস্থায় থাকে, তখন ডায়াস্টোলিক চাপের সৃষ্টি হয়। তখন হৃদপিণ্ড রক্ত ও অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ থাকে। রক্তচাপ বোঝার জন্য এ দুটি পরিমাপ বোঝা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।"
দেহের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ রক্তচাপ বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আদর্শ রক্তচাপের পরিমাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।
এ সম্পর্কে এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এফরোসিনি বারিশ বলেন, "মোটাদাগে বলতে গেলে আদর্শ সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার মার্কারি কিংবা এরচেয়ে কিছুটা কম। আর ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ গড়ে ৭০ থেকে ৮০। তবে ব্যক্তিভেদে এ আদর্শ মানে ভিন্নতা থাকতে পারে।"
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের হিসেব মতে, স্বাভাবিক সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ এর চেয়ে কম। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সিস্টোলিক রক্তচাপ ধরা হয় ১২০ থেকে ১২৯ পর্যন্ত। আর সিস্টোলিক ১৩০ থেকে ১৩৯ পর্যন্ত ধরা হয় উচ্চ রক্তচাপ।
তবে এখানেই শেষ নয়। খুবই বেশি পরিমাণে রক্তচাপকে আবার হাইপারটেনশন স্টেজে ভাগ করা হয়। সিস্টোলিক রক্তচাপ যখন ১৪০ কিংবা এর চেয়ে বেশি হয়, তখন সেটিকে ধরা হয় হাইপারটেনশন স্টেজ ২।
আর সিস্টোলিক রক্তচাপ যখন ১৮০ এর বেশি হয়ে যায়, তখন সেটিকে চরম সংকটাপন্ন অবস্থা বলে ধরে নেওয়া হয়। আদর্শ রক্তচাপের তুলনায় বেশি রক্তচাপের প্রবণতা দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অন্যদিকে ডায়াস্টোলিক চাপের আদর্শ পরিমাপ ধরা হয় ৮০ মিলিমিটার মার্কারি। যখন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের পরিমাণ ৮০ থেকে ৮৯ পর্যন্ত চলে যায়, তখনই উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। আর যদি ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের পরিমাণ ৯০ এর চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন হাইপারটেনশন স্টেজ ২ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
উচ্চ রক্তচাপ দেহে চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করে। অধ্যাপক ভিয়েট লে মনে করেন, সিস্টোলিক/ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের পরিমাণ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ১৩০/৮০ এর ওপরে উঠে যায়, তবে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, চোখের ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
এমনকি নিন্ম রক্তচাপ কিংবা হাইপোটেনশন থেকে উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হাইপারটেনশনকে বেশি ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে নিন্ম রক্তচাপও দেহের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা কিংবা হালকা মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
সহযোগী অধ্যাপক ভিয়েট লি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ আর্টারি থেকে শুরু করে রক্ত চলাচলের সাথে যুক্ত যেকোনো অঙ্গকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আর নিন্ম রক্তচাপকে অনেকটা খরা কবলিত লেকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
কেননা নিন্ম রক্তচাপের ফলে দেহের রক্ত চলাচলের সাথে যুক্ত অঙ্গগুলো পর্যাপ্ত রক্তের যোগান পায় না। ফলে অঙ্গগুলো স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
রক্তচাপের সাথে হৃদরোগ, পানিশুন্যতা, কর্মক্ষমতা, মানসিক চাপ, ওষুধ গ্রহণ কিংবা বিভিন্নধর্মী খাবার গ্রহণ জড়িত। ব্রুকলিনের এনওয়াইউ ল্যাঙ্গোন হসপিটালের কার্ডিওলজিস্ট ডরিস চ্যান বলেন, "উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ উচ্চ-সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণ। তাই লবণযুক্ত খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে এবং এতে করে রক্তচাপ অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে।"
অন্যদিকে সহযোগী অধ্যাপক এফরোসিনি বারিশ প্রায়শই ব্যক্তির রক্তচাপ পরিমাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, "রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যা এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। বিশেষ করে যদি আপনার বয়স ৪০-এর বেশি হয়ে থাকে তবে এই কথা বেশি প্রযোজ্য। একইসাথে কারও চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে কিংবা উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, নিয়মিত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।"