দাম মাত্র ৪৯ রুপি! বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা পিৎজা
প্রশ্ন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলাকালীন বিশ্বের বৃহত্তম পিৎজা ব্র্যান্ডের পদক্ষেপ কি হতে পারে? উত্তর: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা পিৎজা বাজারে নিয়ে আসা।
ডমিনো'স ঠিক এই কাজটাই করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় বাজার ভারতে ডমিনো'স মাত্র ৪৯ রুপিতে (.৬০ ডলার) পিৎজার স্বাদ দিচ্ছে গ্রাহকদের। ভারতে ডমিনো'স ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান নির্বাহী সামির খেতারপাল বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মুনাফা কমে আসছে এবং অনেক গ্রাহক ছুটে যাচ্ছে। প্রবল মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ হলো সস্তা পিৎজা বাজারে নিয়ে আসা।
সামির বলেন, দাম কমিয়ে কোম্পানি বাজারে টিকে থাকতে চায়। পুদিনা ও পাসলি দেওয়া সাত ইঞ্চির পিৎজাটি ডমিনো'স এর সবচেয়ে সস্তা বলে নিশ্চিত করেন তিনি ।
সামির জানান, দোকানে আসুন বা অ্যাপ থেকে অর্ডার করুন; ৪৯ রুপিতে পিৎজা পাচ্ছেন। ডমিনো'স এর গ্লোবাল টিম এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, সব জায়গায় দাম বেশি তাই গ্রাহকরা কম খেতে যাচ্ছে। আমরা চাই না আমাদের বিদ্যমান গ্রাহকরা কোন প্রতিযোগিতায় যাক।
সাংহাইতে ডমিনো'স এর সবচেয়ে সস্তা পিৎজার দাম ৩.৮০ ডলার। আর সান ফ্রান্সিসকোতে অনলাইন ম্যানুতে দাম দেখায় ১২ ডলার। দোকানের মূল্য তালিকা চাইলে ডমিনো'স এর প্রধান কার্যালয় থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
১৪০ কোটি মানুষের দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলাকালীন ডমিনো'স, পিৎজা হাট এবং বার্গার কিংয়ের মতো ফাস্ট-ফুড জায়ান্টরা কীভাবে কৌশল বদলাতে বাধ্য হচ্ছে তা জানতে ছয়জন নির্বাহী এবং ১২ জন স্টোর ম্যানেজারের সাথে কথা বলে রয়টার্স।
কোম্পানিগুলো গত তিন দশক ধরে দ্রুত বর্ধনশীল গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারে অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেখানে স্ট্রিট ফুড সংস্কৃতি ও ১০ রুপিতে পাওয়া সমুচার সাথে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন।
সামির খেতারপালের জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস ভারতে ডমিনো'স এর ১ হাজার ৮১৬টি আউটলেট চালায়। তিনি জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে তাদের ৭০ শতাংশ মুনাফা কমেছে।
সামির বলেন, ঐতিহাসিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে বাজারে টিকে থাকতে এবং খরচ কমানোর বিষয়ে নতুন উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে প্রতি সোমবার কর্মরত ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
ভারতে তাদের নেওয়া উদ্যোগ ও আর্থিক সুবিধার কথা তুলে ধরেন সামির। তিনি জানান, ভারতের দোকানে বিক্রি হওয়া পিৎজার সব বাক্সে এখন আর ঢাকনা ব্যবহার করা হয় না। এতে প্রতিবার ০.৬ সেন্ট সাশ্রয় হচ্ছে।
সামির জানান, এতে করে প্যাকেজিংয়ে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হচ্ছে। কারণ ভারতে দোকানে সার্ভ হয় ৩৭ শতাংশ অর্ডার।
এছাড়াও স্টোর মালিকদের অগ্রিম অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ভাড়ায় ছাড় পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস। অর্থ সাশ্রয় বিষয়ে এরচেয়ে বেশি তথ্য দিতে রাজি হননি সামির।
গ্রাহকদের শূন্য পকেট
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখছে মূল্য-সংবেদনশীল বাজার ভারত। ডমিনো'স ছাড়াও অন্যান্য কোম্পানি ভারতে সস্তায় ফাস্ট-ফুড বিক্রি করছে। আশা করা হচ্ছে, কম দামের অফারের কারণে গ্রাহকরা দোকান ও অ্যাপে বেশি ঢুকবে, তারা হয়তো এরপর বেশি দামের কোন খাবারও অর্ডার করতে চাইবে।
পিৎজা হাট গত বছর থেকে ৭৯ রুপিতে পিৎজা বিক্রি করছে। এই ব্র্যান্ডের ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি স্যাফায়ার ফুডস বলছে, এটি বিশ্বব্যাপী পিৎজা হাটের কোন পণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য।
ভারতীয় উপমহাদেশে পিৎজা হাটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরিল পেরেইরা বলেন, ভারতের মূল্য-সচেতন গ্রাহকদের কাছে, ৭৯ রুপির পিৎজা ব্র্যান্ডকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তোলে। কম দামের পিৎজা তরুণদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বলেও জানান তিনি।
ম্যাকডোনাল্ডস জুন মাসে অর্ধ-মূল্যের খাবার চালু করেছে। পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতে ম্যাকডোনাল্ডসের ৩৫৭টি আউটলেট পরিচালনাকারী ওয়েস্টলাইফ ফুডওয়ার্ল্ড এর নির্বাহী পরিচালক অক্ষয় জাটিয়া বলেন, এই মূল্য গ্রাহক আরো বাড়াবে। বিক্রি ও মুনাফাও বাড়বে।
ভারতের চারটি রাজ্যের বিভিন্ন দোকান পরিদর্শন করেছে রয়টার্স। অনলাইন-অফলাইন সব জায়গাতেই তারা কম দামের পণ্যের ব্যাপক প্রচার লক্ষ্য করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৯ রুপির পিৎজা বাজারে আনে ডমিনো'স। সামির জানান, তারা রন্ধণপ্রণালী থেকে টমেটো বাদ দিয়ে ৫৯ রুপির পিৎজা এখন ৪৯ রুপিতে বিক্রি করছেন।
জুবিল্যান্ট ফ্যাঞ্চাইজি জানায়, ২০২২-২৩ সালে পনিরের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মুরগী ও বাক্সের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। টমেটোর মূল্য রেকর্ড ৪০০ শতাংশ বাড়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছেন তারা।
এই খাতের ব্যবসায়ীরা ধনী ও গরিব; দুই শ্রেণির বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন। অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ বিদেশি এসব খাবারের দোকানে খাওয়াকে জীবনধারার উন্নয়ন বলে দেখতেন। তারা এখন নিজেদের সংযত করছেন। অন্যদিকে উচ্চ দামের স্মার্টফোন ও গাড়ির পেছনে দেদারছে খরচ করছেন ধনীরা।
চেন্নাই ও অন্যান্য শহরে পরিদর্শন করে সামির দেখতে পান, ৪৯ রুপি পরিশোধের পর গ্রাহকের পকেটে আর অর্থ অবশিষ্ট নেই। বিপরীতে, কিছু ধনী এলাকায় ডমিনো'স এর নতুন ১৪ ডলার সমমূল্যের গুরমেট পিৎজার বিক্রি বেড়েছে।