তারা কেতাদুরস্ত, তারা স্বতন্ত্র, তারা 'ওল্ড স্কুল'? কেন তারা ক্ল্যাসিক ফ্যাশন আঁকড়ে আছেন!
হালফ্যাশনের স্রোতধারায় পোশাকের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। নানাবিধ কাটিং-প্যাটার্ন-ডিজাইনের জায়গায় নিত্য আসছে পরিবর্তন, তরুণরাও তাল মিলিয়ে চলছে সেই হাল ফ্যাশনের সাথে। তবে বরাবরই একটি শ্রেণী থাকে যারা এ স্রোতের উল্টো ধারায় চলে। বরং একটি নির্দিষ্ট সময়ের ফ্যাশনকে অনুকরণ করে তারা। বাক্য গঠনে ব্যাকরণের প্রতি যেমন সজাগ থাকতে হয়, পোশাকের ক্ষেত্রেও তেমন ব্যাকরণ মেনে চলেন তারা। এই ব্যাকরণ যারা জানেন না তাদের কাছে সেই শ্রেণীর মানুষকে কখনো মনে হবে কেতাদুরস্ত, কখনো স্বতন্ত্র, কখনোবা 'ওল্ড স্কুল'।
ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তেমনি একজনকে চিনতাম। যার চলাফেরা, পোশাক-আশাক, আদব কায়দা বাকি সবার থেকেই ছিল আলাদা। প্রেজেন্টেশন যখন থাকতো, দেখতাম বাকি সব ছেলেবন্ধুর পোশাকের চেয়ে ঐ বন্ধুটির পোশাক আলাদা। দেখা যেত, সবাই শার্ট প্যান্ট টাই পরে আছে। কিন্তু সে বন্ধুটি পরে আছে ঢোলা শার্ট, সাথে সামনে কোমর থেকে কাঁধ বরাবর লম্বালম্বি দুটি বেল্ট বাঁধা (সাসপেন্ডার)। আবার কখনো দেখা যেত, টাইয়ের বদলে শার্টের নিচে গলায় কোনো সিল্ক কাপড় (এস্কর্ট) জড়ানো। এখনকার ছেলেদের কাছে যেখানে প্যান্ট কোমর থেকেও খানিকটা নিচে পরাই ফ্যাশন, সেখানে বন্ধুটিকে দেখতাম, উঁচু করে প্যান্ট পরে আসতো। টাই আসার আগে যে সাস্পেন্ডার দিয়েই প্যান্ট পরা হতো আর এস্কোর্ট যে সৈন্যদের আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো, সে তো জানতামই না। বরং ফরমাল পোশাকের সঙ্গে এরকম আলংকারিক অনুষঙ্গ দেখে খানিকটা হাসাহাসিই করতাম আমরা সত্যি বলতে।
এরপর এলো কর্মজগত। সেখানেও মিললো এমনি একজনের দেখা। যার পোশাক, আদবকেতা ছিল বাকি সবার চেয়ে আলাদা। বাকি সব সহকর্মীদের থেকে একনজরেই আলাদা বলে মনে হতো তাকে। কৌতুহল হলেও কখনো জানতে চাইনি এ নিয়ে। ধারণা করতাম, হয়তো পুরোনো বা ভিন্টেজ পোশাকের প্রতি আগ্রহ থেকেই তারা এমন বেশভূষায় চলেন। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে জানতে পারলাম, যাকে আমার মতো আনাড়িরা এতদিন ভিন্টেজ বা ওল্ড স্কুল ফ্যাশন বলে চিনে এসেছে, সেটিই আসলে 'ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যার'।
'ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যার' কোনগুলো
লাতিন শব্দ ক্ল্যাসিকাস থেকে এসেছে এই এই শব্দটি। 'ক্ল্যাসিকাস' দিয়ে মূলত উচ্চবর্গীয় রোমানদের বোঝানো হয়। সে অর্থে 'ক্ল্যাসিক' শব্দটি কোনোকিছুর প্রথম এবং উচ্চশ্রেণী বা মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়।
পোশাক আশাকের ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক ফ্যাশন বলতে বোঝায় এমন কিছু যা কখনো পুরোনো বা পরিবর্তনীয় নয়। যুগে যুগে অনেক সংস্কৃতিই আমাদের সাথে মিশেছে, এখনো মিশছে। আর ইন্টারনেট, ইউটিউব, বিশ্বায়নের কল্যাণে নানারকম উপসংস্কৃতি (সাবকালচার) জন্ম নিয়েছে এখন। এরা ক্ষণিকের জন্য এসে আবার চলেও যায়। এই যেমন হিপ্পি পাংক বা বেল বটম। এধরনের ফ্যাশনের যুগ যদিও বেশিদিন টেকেনি। কিন্তু বাটন-ডাউন শার্ট বা ব্লেজার পাম্প, লোফার বা ক্লাচ পার্স, মুক্তার নেকলেস-এগুলো সবসময়ই টিকে থাকবে। এগুলোকেই ক্ল্যাসিক পোশাক হিসেবে ধরা হয়।
সারা বিশ্বে ক্ল্যাসিক পোশাকের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয় মূলত ১৯২০-৬০ সালের সময়টিকে। আর ৬০-৭০ দশকের জনপ্রিয় ব্রিটিশ এবং আমেরিকান দুই তারকা ক্যারি গ্র্যান্ট এবং ফ্রেড অ্যাস্টায়ারকে ধরা হয় ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যারের আইকন হিসেবে।
অনেকেই রেট্রো বা ভিন্টেজ স্টাইলের সঙ্গে ক্ল্যাসিক স্টাইলকে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু ক্ল্যাসিক মানে এটি কখনো পুরোনো হবেনা। এতে যেমন ক্ল্যাসিক যুগের সেই ধরাবাঁধা ব্যকরণ থাকবে, তেমনি থাকবে হালযুগের ছোঁয়া। পুরুষদের ক্ল্যাসিক পোশাক বলতে বোঝানো হয় কালো বা গাঢ় রঙের স্যুট, ট্রেঞ্চ কোট এবং একটি কালো অক্সফোর্ড জুতো। তবে, ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলোর মতে- জিন্স, চেক শার্ট, খাকি প্যান্ট, কার্ডিগান, লোফার-এগুলোকেও এখন ক্ল্যাসিক হিসেবে ধরা হয়।
আর বাঙ্গালী পোশাকের মধ্যে ধুতি, শেরওয়ানি, পাঞ্জাবী বা নেহরু কোটকে ধরা হয় ক্ল্যাসিক হিসেবে। একসময় হিন্দু জমিদার বাড়িতে বাবুমশাইদের রুচিশীল ও আড়ম্বরপূর্ণ পোশাক ছিল ধুতি, সিল্কের পাঞ্জাবি, মাথায় পাগড়ি, পাম্পশু, হাতে আংটি এবং আচকান।
পোশাক নিয়ে কি পুরুষরা মাথা ঘামায়না?
আমাদের দেশে ছেলেদের পোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট হয় খুব কম। ছেলেদের পোশাক বা স্টাইলের উপকরণও খুব সীমিত। কোনো অফিশিয়াল বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে শার্ট, প্যান্ট, কোট বা স্যুট; আর ক্যাজুয়াল কোনো অনুষ্ঠানে গেঞ্জি, জিন্স বা পায়জামা-পাঞ্জাবি। এভাবেই তাদের সাজসজ্জা হয় সাধারণত।
তবে কেউ কেউ তাদের পোশাক সম্পর্কে বেশ সচেতন। এমন একজন হলেন তওসীফুল ইসলাম। ছোটোবেলায় নানার স্যুটগুলো নিজেই পরে পরে দেখতেন, বাবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে পোশাক নিয়ে সচেতন ভাবটা তার মধ্যে আগেই গড়ে উঠেছিল। এছাড়া খুব ছোটো থেকে সিনেমা এবং বইয়ের প্রতি নেশা থাকায় দশ বছর বয়সেই জেমস বন্ড, গডফাদার পড়া হয়ে যায় তার। কাহিনী বুঝতে বেগ পেতে হলেও, চরিত্রগুলোর ফ্যাশন স্টাইল তাকে খুব টানতো। বইয়ের পাতায় গডফাদারের সাদা স্যুটের বর্ণনা, টিভির পর্দায় গ্রেগরি পেকের সেই স্যুটেড বুটেড হয়ে ভেস্পা চালানো, সত্যজিতের নায়ক সিনেমায় উত্তম কুমারের টাকার মরুভূমির ওপর হেঁটে যাওয়া-এ সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করতো। ছোট বাচ্চারা যেমন সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যান হতে চাইতো, তওসীফ চাইতেন সিনেমার সেই চরিত্রগুলোর মতো হতে; তাদের চলাফেরা, পোশাক আশাক অনুকরণ করতে।
তাই স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদালয় থেকে তিনি নিয়মিতভাবে ক্ল্যাসিক স্টাইলই অনুসরণ করেন। আগে ক্লাসে এবং বর্তমানে অফিসে স্যুট বা জ্যাকেট পরে যান নিয়মিত। গরমের মধ্যে এসব পোশাক পরে চলাফেলা করায় অনেক ব্যঙ্গ যেমন শুনতে হয়, তেমনি অনেকে প্রশংসাও করে। অনেকে আবার আগ্রহ থেকে জানতেও চায় তার এই ফ্যাশনবোধ সম্পর্কে।
তওসীফ বলেন, "আমি আসলে এগুলোই ভালোবাসি এবং আমি যা-ই পরিনা কেন সবসময় ক্ল্যাসিক ফ্যাশন মেইনটেইন করি। যেহেতু আমি একজন ইন্ট্রোভার্ট মানুষ এবং পারিবারিকভাবেই আদবকেতার চর্চাটা হয়ে আসছে, তাই আমার মনে হয় এই ড্রেস সেন্স আমাকে কমপ্লিমেন্টও করে।"
তবে এই সাজসজ্জার জন্য অনেক সময় বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়। দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে জানান, "সিএনজিতে যখন উঠি, তখন দেখি অন্যদের কাছে যা চায়, আমার কাছে এসে ভাড়া ২০০ বাড়িয়ে বলে। এটা আমার পোশাকের জন্যই ভাবে।"
আবার একবার একজন বিদেশী এসে তাকে জানায়, 'তোমাকে (পোশাক) দেখে আমার ইতালির দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেছে।' এরকম হুটহাট প্রশংসাও এসে জমে তার ঝুলিতে।
তবে এই প্রশংসার লোভ বা অন্যকে দেখানোর জন্য নয়। বরং নিজের পারিবারিক চর্চা এবং গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলোর প্রতি ভালোলাগা থেকেই তিনি নিজেকে এভাবে সাজাতে পছন্দ করেন। বাস্তবে তিনি এ যুগের হলেও, মননে এবং পোশাকে তওসীফ পুরোনো দিনেরই একজন।
শুধু বাইরের সৌন্দর্য্য নয়, পোশাক চলাফেরাতেও পরিমিতিবোধ এনে দেয়
মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে পোশাক। যেমনটা ফুটে উঠেছে রোমান হলিডের জো ব্র্যাডলির সেই নচড ল্যাপেল ব্লেজার, কাসাব্লাঙ্কার ক্যাফে ওনার রিক ব্লেইনির সেই কালো টাই কিংবা গডফাদারের ডন ভিটো কর্লিয়নির পকেটের লাল গোলাপে তাদের নিজস্ব চরিত্রগুলো।
তওসীফের এক বন্ধু মাহবুবুল আলম চৌধুরী। পেশায় ব্যাংকের একজন বড় কর্মকর্তা। সাজসসজ্জায়, ফ্যাশনবোধে তিনিও তওসীফের সমমনা। তবে ছেলেদের পোশাক নিয়েও যে এত নিয়ম, এত ব্যকরণ আছে তা তিনি জানতে পারেন বীরপ্রতীক শাহজামান মজুমদারের কাছ থেকে।
শাহজামান মজুমদার ছিলেন একজন ফ্যাশন আইকন। 'কিং অব ঢাকা' নামে একটি ব্লগ চালাতেন। যেখানে প্রতিদিনের পোশাক-পরিচ্ছদের ছবি আপলোড দিয়ে বিস্তারিত একটি বর্ণনা জুড়ে দিতেন তিনি। ব্লগ পড়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করলে সাগ্রহে সেগুলোর উত্তর দিতেন। সেই ব্লগের নামেই তিনি পরিচিত 'কিং অব ঢাকা' নামে।
মাহবুব শুধু সাজসজ্জাতেই নয়, এই ক্ল্যাসিক্যাল মেনসওয়্যারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভিত্তি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা এবং লেখালেখি করছেন। কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পোশাকে বিপ্লব আসলো। এস্কর্ট থেকে টাইয়ের প্রচলন শুরু হলো, কীভাবে শার্ট আন্ডারগার্মেন্টস থেকে বাইরের পোশাকে রূপ নিল, পা মোজা, খেলাধুলার জন্য যেভাবে সাসপেন্ডার থেকে প্যান্ট বেল্টের সূচনা- এসব নিয়ে তার বিস্তর পাণ্ডিত্য।
মাহবুব বলেন, "আমরা বেশিরভাগ মানুষই অন্যকে নকল করে ড্রেসআপ নিই। অন্য কাউকে পকেট স্কয়ার পরতে দেখলাম, আমিও তাই পরা শুরু করলাম। কিন্তু পকেট স্কয়ারের আসল উদ্দেশ্য বা কীভাবে পরতে হয়, কখন পরতে হয় তা জানিনা।"
মাহবুব নিজে তো এসব আদবকেতা মেনে চলেনই, নিজের আট বছরের ছোট ছেলেকেও এসব সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন। তার মতে, পোশাক শুধু বাইরের সৌন্দর্য্যই নয়, আচার-আচরণ, চলাফেরায়ও পরিমিতিবোধ এনে দেয়।
একই ধারণায় বিশ্বাসী শাবাব দীন শারেক। শারেকের বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। যে কারণে, ফরমাল বা ক্ল্যাসি মেনসওয়্যার নিয়ে তার জানাশোনা আগে থেকেই ছিল। বর্তমানে কাজ করছেন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'শপ আপ' এর সঙ্গে। সেই সাথে 'জেন্টেলম্যান ওয়্যারড্রোব' এর সিইও হিসেবে কাজ করছেন। এর বাইরে ২০১৪ সাল থেকে এই মেনসওয়্যার ফ্যাশন নিয়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপও চালাচ্ছেন তিনি। সেখানে গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে থাকেন।
গ্রুপটির নাম 'জেন্টেলম্যান্স অব বাংলাদেশ'। মূলত পোশাকের ব্যাকরণ বা আদবকেতা নিয়ে এখানে সদস্যদের মাঝে আলোচনা হয়। ফ্যাশন সচেতন পুরুষেরা তাদের বিভিন্ন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা পরামর্শ দিয়ে নতুনদের সাহায্য করে থাকেন। শারেক মনে করেন, "হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে একটা সময় পর তা আর চলেনা। তখন সে কাপড়গুলো নষ্ট হয়। কিন্তু ক্ল্যাসিক বলতে আমরা যা বুঝি তা কিন্তু কখনো ফেলনা যাবেনা। বিশ্বের সবজায়গায়, সবসময় সে পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। তাই পোশাকের পেছনে বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি।"
ফেসবুকে নিজের গ্রুপে তাই ছেলেদের পোশাক সম্পর্কে সচেতন এবং কীভাবে পোশাকের পেছনে বারবার ব্যয় না করে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করেন সদস্যদের সঙ্গে।
আছে দর্জির ঝক্কি
ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যারের উৎপত্তি মূলত ইংল্যান্ডের সাভিল রো স্ট্রিট থেকে। সেলাই থেকে শুরু করে পরিধানের আদবকেতায় সারাবিশ্বেই ক্ল্যাসিক মেনসওয়ারের মোট তিন ধরনের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করা হয়। আমেরিকান, ব্রিটিশ মিলিটারি এবং ইতালিয়ান পোশাক। অনেকে এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের মতে ফ্রেঞ্চ, ব্রিটিশ এবং ইতালিয়ান- এই তিন ধরনের বুনন এবং স্টাইল আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
ক্ল্যাসিক পোশাকের রঙগুলোই হয় আলাদা- কালো, বাদামী, গাঢ় সবুজ বা হালকা হলদে, ধূসর কোনো রঙ। কাপড়ের বুননশৈলীও হয় সুতি, উল বা সিল্কের। আমাদের দেশে মূলত ইংরেজদের ফ্যাশন সংস্কৃতিই বেশি অনুসরণ করা হয়।
তবে, বাংলাদেশের মত একটি দেশে যেখানে মেনস ফ্যাশন নিয়ে চর্চা হয় কম, সেখানে এধরনের পোশাক বানাতে সত্যিই বেগ পেতে হয়। দর্জিদের জ্ঞানের অভাব এবং কাপড়, সুতার মত কাঁচামালের অভাবের কারণে রাজধানীতে এই ঘরানার পোশাক টেইলারিং খুব সীমিত।
বিগত কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার কেতাদুরস্ত ও ফ্যাশনসচেতন মানুষের চাহিদা মিটিয়ে টেইলারিংয়ের ময়দানে পাকাপোক্ত অবস্থান করে নিয়েছে ড্যাপার বেসপোক টেইলরিং। মেনস ফ্যাশনের যাবতীয় পোশাক ক্রেতার চাহিদা ও পছন্দসইভাবে দক্ষ কারিগর দিয়ে বানানো হয় এখানে। শার্ট- প্যান্ট, ব্লেজার-কোট, সাফারি-শেরওয়ানি, জ্যাকেট-শ্যাকেট, স্যুট সবই বানানো হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্যাশন আইকন শাহজামান মজুমদার।
শাহজামান হাতেকলমে কখনো টেইলারিং না করলেও সুই- সুতা, সেলাই-কাপড়ের ব্যাপারে তার ছিল অগাধ জ্ঞান। তওসীফ নিজেও তার প্রায় সব স্যুট সেখান থেকেই বানিয়ে নেন। ক্ল্যাসিক মেনসওয়ারের জন্য বর্তমানে ঢাকায় ড্যাপার বেসপোককে এক নাম্বার ধরা হয়। এর বাইরে গুলশানের সারটোরিয়াল, এলিফ্যান্ট রোডের মনসুর ভবনে দু একটা দোকান আছে, যারা এই সুবিধা দিতে পারে।
একে তো ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যারের দক্ষ কারিগর নেই, দ্বিতীয়ত একটি পোশাকের পেছনে যেরকম ধৈর্য্য ও সময় দরকার হয়, তা-ও নেই দর্জিদের মাঝে। তৃতীয়ত, কাস্টমাররা নিজেরাই এ ব্যাপারে সচেতন না থাকায়, তারা একাধিকবার ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যেতে চাননা। যেখানে ক্ল্যাসিক মেনসওয়্যারের বুননের বৈশিষ্ট্যই হলো, চার থেকে পাঁচবার ট্রায়াল দিয়ে দিয়ে কাপড় বানানো। চতুর্থত, পর্যাপ্ত টেইলারিং সুবিধা না থাকায় যে কয়েকটি দোকানে এসব সুবিধা পাওয়া যায়, সেখানেও মজুরি পড়ে যায় অনেক বেশি। যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব না।
একসময় সব কাপড়ই দর্জিরা বানাতো। কিন্তু ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের পর মেশিনের কল্যাণে শুরু হয় গণহারে পোশাক বানানো। এতে সময়ও কম লাগে, কাপড় রেডিমেড আকারেই হাতের নাগালে মেলে কম দামে। সবাই গণহারে ব্যবহার করতে শুরু করলে 'ক্ল্যাসিক' এর ধারণা বা ব্যাকরণ, নিয়মগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এখনও পুরো বিশ্বেই কিছু মানুষ আছেন যারা হালের ফ্যাশন এড়িয়ে ক্ল্যাসিক ঘরানার পোশাকেই খুঁজে পান স্বাচ্ছন্দ্য।