বৈশ্বিক ক্রম তালিকায় ছন্দপতন, লয়েডস লিস্টে ৩ ধাপ পেছালো চট্টগ্রাম বন্দর
কন্টেইনার পরিবহনের হিসেবে ২০২৩ সালে বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০টি বন্দরের তালিকায় ৩ ধাপ পিছিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ১ বছরের ব্যবস্থানে এই তালিকায় ৬৪তম স্থান থেকে ৬৭তম স্থানে পিছিয়ে যায় দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর।
লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টে প্রতিবছরের মতো ২০২৩ সালের ১০০টি বন্দরের তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭ তম।
২০২২ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে লয়েডস লিস্ট সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করে।
লয়েডস লিস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২ সালে ৩১,৪২,৫০৪ টিইইউ কান্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। ২০২১ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩২,১৪,৫৪৮ টিইইউ। অর্থাৎ ২০২২ সালে ২০২১ সালের তুলনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ৭২,০৪৪ টিইইউ বা ২.২ শতাংশ।
লয়েডস এর তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে চীনের সাংহাই বন্দর। দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর বন্দর।
সমুদ্রে পথে মোট বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মোট কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ ভাগ হয় দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট সহ বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দার কারণে ২০২২ সালে ২০২১ সালের তুলনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যায়। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানও কমে যায় বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, "রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর অনেক বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যায়। এর প্রভাবে ২০২২ সালের লয়েড লিস্টে পৃথিবীর চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানও অনেক বন্দরের মতো পিছিয়ে পড়ে। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ কমলেও কার্গো হ্যান্ডলিং সেই তুলনায় কমেনি।"
তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। আগামী বছরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরো এগিয়ে আসবে।
লয়েডস লিস্টে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিলো ৮৮। এরপর ২০১১ সালে ৮৯ তম, ২০১২ সালে ৯০ তম, ২০১৩ সালে ৮৬ তম, ২০১৪ সালে ৮৭ তম, ২০১৫ সালে ৭৬ তম, ২০১৬ সালে ৭১ তম, ২০১৭ সালে ৭০ তম, ২০১৮ সালে ৬৪ তম, ২০১৯ সালে ৫৮ তম এবং ২০২০ সালে ৬৭তম, ২০২১ সালে তিন ধাপ এগিয়ে ৬৪তম হয় চট্টগ্রাম বন্দর।
সবশেষ ২০২২ সালের তালিকায় ফের তিন ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম স্থানে চলে গেল বন্দর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লয়েডস লিস্ট শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের হিসাবের উপর ভিত্তি করে করা হয়। সেখানে বন্দরের সেবার মান বিবেচ্য নয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন হয় তার ২৭ ভাগ হয় কন্টেইনারের মাধ্যমে। বাকি ৭৩ শতাংশ পরিবহন হয় খোলা জাহাজ ( বাল্ক ক্যারিয়ার) ট্যাংকারে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "করোনার প্রভাব কাটতে না কাটতে শুরু হয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিশ্বের অন্যান্য বন্দরেও পড়ে। আশা করি ভবিষ্যতে এই সংকট কেটে যাবে। লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরো উন্নতি হবে।"