মহামারির চেয়েও মূল্যস্ফীতির আঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হরলিক্সের ব্যবসা
দেশের বেশিরভাগ পরিবারই যেখানে তাদের অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে হরলিক্সের মতো খাবার স্বাভাবিকভাবেই তাদের বাজারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
এ বছরের এপ্রিল-জুনে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় হেলথ ফুড ড্রিংক হরলিক্স তৈরি এবং বিপণনকারী কোম্পানি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের ত্রৈমাসিক রাজস্ব কমেছে ২৪%। এ সময়ে কোম্পানির আয় ৮২.৬ কোটি টাকা। করোনা মহামারি চলাকালে অর্থাৎ ২০২০, ২০২১ সালের একই সময়ের চেয়েও এই আয় কম।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে হরলিক্সের দামও অনেক বেড়েছে। অর্থাৎ, রাজস্ব যতোটা না কমেছে, তারচেয়ে বেশি কমেছে বিক্রি।
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের চেয়ারম্যান মাসুদ খান বলেন, "মূল্যস্ফীতির আঘাতে বিধ্বস্ত গ্রাহকদের সামর্থ্য কমে যাওয়ায় পরিবারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ কারণেই বিক্রি কমেছে।"
মহামারি চলাকালীন সময়ে কোম্পানিটি হরলিক্সের ১০ টাকার মিনিপ্যাক বাজারে ছাড়ে। এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে খাওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ হরলিক্স দিয়ে বানানো হয় ওই মিনিপ্যাক। এ উদ্যোগ সেসময় বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করেছে।
এমনকি করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধারের সময়টায়, অর্থাৎ ২০২২ সালে হরলিক্স ২৬% বাংলাদেশি পরিবারের কাছে পৌঁছেছে, যা এর দুই বছর আগে ছিল ১৬% এর কম।
মাসুদ খান টিবিএসকে বলেন, মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় তারা হরলিক্সের বড় জার কেনার পরিবর্তে সীমিত পরিমাণে কেনাটাই বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করে সেসময়।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবে উৎপাদনের ব্যয় ক্রমশ বাড়তে থাকায় লাভজনক এই মিনিপ্যাক বিক্রিও কমে আসে। কাঁচামাল এবং ডলারের দাম বাড়ার প্রভাবে ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রাথমিকভাবে মিনিপ্যাকগুলোর দাম বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়। আবার এ বছরের শুরুতে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা রাখা হয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের মোট আয়ের ৯০%ই আসে হরলিক্সের বিভিন্ন পণ্য থেকে। এ কোম্পানির অন্য হেলথ ফুড ড্রিংক হলো বুস্ট ও মাল্টোভা। কোম্পানিটি গ্লুকোজ পণ্য গ্লুকোম্যাক্সডি উৎপাদন ও বিক্রি করে।
চলতি বছর পণ্যের দাম যে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে তা কোম্পানির লাভ ধরে রাখার মতো যথেষ্ট ছিলনা কারণ তাদের গ্রস প্রফিট মার্জিন (উৎপাদন খরচ মেটানোর পর একটি কোম্পানির যা রাজস্ব থাকে) এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ৪৭% এ নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৫৪%।
তবে, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার তাদের পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে এবং আর্থিক আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
উল্লেখ্য ত্রৈমাসিক ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের নিট মুনাফা ছিল ১৬.৫২ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১৮.০৬ টাকা।
স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে কঠোর প্রতিযোগিতার মধ্যে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ (যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গ্লোবাল হেলথ কেয়ার জায়ান্ট গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের একটি কোম্পানি) ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে অবস্থিত তাদের ফার্মাসিউটিক্যালস প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এটি।
হেলথ ফুড ড্রিংক, গ্লুকোজ, সেনসোডাইন টুথপেস্ট এবং অ্যান্টাসিড পণ্য ইনো নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেছে তারা।
গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের হেলথ ফুড ড্রিংক এবং গ্লুকোজ ব্র্যান্ডগুলো ইউনিলিভার কিনে নেওয়ার পর ২০২০ সালে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ পরিণত হয় ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারে।
অন্যদিকে গ্লোবাল গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বুরোস ওয়েলকাম অ্যান্ড কো (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মাধ্যমে সেনসোডাইন টুথপেস্ট ও ইনো আমদানি এবং বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।