তোশাখানা: রুমাল, ফল, ছোরা, জামাকাপড়ও রেখে দিয়েছেন পাক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা
তোশাখানা থেকে নেওয়া উপহারের তথ্য গোপন করার অপরাধে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ডসহ ১ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
তবে সম্প্রতি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ সাল পরবর্তী তোশাখানার উপহার সংক্রান্ত নথিতে দেখা গেছে, শওকত আজিজ থেকে শেহবাজ শরীফ, প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই তোশাখানা থেকে কম মূল্যে উপহার কেনার সুবিধা ভোগ করেছেন।
তালিকায় তোশাখানা থেকে সুবিধাভোগীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আছে রাজনীতিক আর আমলাদের নাম। তবে উপহারগুলোর তালিকা অনেককেই অবাক করতে পারে। শার্ট, রুমাল, শাড়ি, ফল, ঘড়ি, কারুকার্য করা ছোরা পর্যন্ত নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন তারা।
নথি অনুসারে, মাত্র কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ উপহারই বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে নিজেদের কাছে রেখেছেন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বিদেশ ভ্রমণের সময় একটি করে বুলেটপ্রুফ গাড়ি উপহার পেয়েছিলেন। তোশাখানায় অল্প কিছু অর্থ দিয়ে গাড়ি দুটো নিজেদের কাছে রেখেছেন তারা।
নথি অনুযায়ী, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং তার অন্তত পাঁচটি মূল্যবান হাতঘড়ি, অলঙ্কার এবং আরও কিছু জিনিসপত্র অল্প কিছু অর্থ পরিশোধে নিজেদের কাছে রেখেছেন।
এছাড়া, পারভেজ মোশাররফ ও শওকত আজিজ এক পয়সা না দিয়ে শত শত বিদেশি উপহার হজম করেছেন বলেও জানা যায়।
পাকিস্তানের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন রাজনীতিবিদের তোশাখানা উপহারের বিস্তারিত তুলে ধরেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডন।
আসিফ আলি জারদারি
প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জারদারি ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি একটি সাদা রঙের বিএমডব্লিউ ৭৬০ (সিকিউরিটি ভার্সন) নিজের কাছে রাখেন। গাড়িটির মূল্য ২৭.৩ মিলিয়ন রুপি নির্ধারিত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিশোধ করেছিলেন মাত্র ৪ মিলিয়ন রুপির কিছু বেশি।
এছাড়া, ২০১১ সালে তিনি বেশকিছু ঘড়ি ও অন্যান্য মূল্যবান উপহার এবং একটি বন্দুক তোশাখানা থেকে নিয়েছিলেন। কয়েকশো মিলিয়ন রুপির সেসব উপহারের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিশোধ করেছিলেন মাত্র ৩.২৫ মিলিয়ন রুপি।
নওয়াজ শরিফ
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ উপহার পেয়েছিলেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। গাড়িটির মূল্য ৪.২৫ মিলিয়ন রুপি হলেও মাত্র ০.৬৩৬ মিলিয়ন রুপি পরিশোধের মাধ্যমে তিনি এটি নিজের করে নেন।
ইমরান খান
ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৩.৮ মিলিয়ন রুপি মূল্যের একটি গ্রাফ ঘড়িসহ পাঁচটি মূল্যবান হাতঘড়ি উপহার পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মাত্র ০.৭৫৪ মিলিয়ন রুপি দিয়ে তিনি উপহারগুলো নিজের কাছে রাখেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৫ মিলিয়ন রুপির একটি গ্রাফ ঘড়ি, ৫.৬ মিলিয়ন রুপির এক জোড়া কাফলিঙ্ক, দেড় মিলিয়ন রুপির একটি কলম এবং ৮.৭৫ মিলিয়ন রুপির একটি আংটির জন্য মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে রোলেক্স ব্র্যান্ডের মূল্যবান ঘড়িসহ আরও বেশকিছু উপহার অল্প কিছু অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে নিজের কাছে রাখেন ইমরান।
এছাড়া, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বুশরা বিবি ৯ মিলিয়ন রুপির একটি নেকলেস, ২.৪ মিলিয়ন রুপির একটি ব্রেসলেট, ২.৮ মিলিয়ন রুপির একটি আংটি এবং ১.৮৫ মিলিয়ন রুপি মূল্যের এক জোড়া কানের দুলের বিনিময়ে মাত্র ৯ মিলিয়ন রুপি পরিশোধ করেন।
আরিফ আলভি
তোশাখানার প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির স্ত্রী সামিনা আলভি ১.১৯ মিলিয়ন রুপির একটি নেকলেস ৮৬৫,০০০ রুপির বিনিময়ে নিজের করে নেন।
এদিকে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নিজেও আড়াই মিলিয়ন রুপির একটি রোলেক্স ঘড়ির জন্য পরিশোধ করেন মাত্র ১.২ মিলিয়ন রুপি।
পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, আমলা, বিচারক ও সেনা কর্মকর্তারা তোশাখানার নিয়ম ভেঙে নামমাত্র মূল্যে বিদেশি উপহারসামগ্রী নিজেদের কাছে রেখেছেন। স্বচ্ছতা আনতে এসব তথ্য এখন প্রকাশ করছে দেশটির সরকার।