কাস্টমস ওয়েবসাইটে সাবেক কর্মকর্তাদের নামের পাশে লেখা হলো ‘গজবে এলাহী’সহ আপত্তিকর শব্দ
দেশের প্রধান শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামের পাশে অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তিকর উপাধি উল্লেখ করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের নামের পাশে 'গজবে এলাহী'সহ নানা কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত রাজস্ব খাতের কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নজরে আসার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ রবিবার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে ওয়েবসাইট থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো সরিয়ে নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো একটি চক্র বলপূর্বক হ্যাকিং করে এলোমোলো তথ্য আপলোড করেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইট chc.gov.bd-এর 'একনজরে' অংশে প্রতিষ্ঠানটির অতীত ইতিহাস উল্লেখ করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এই শুল্ক স্টেশনে যারা শীর্ষ পদে ছিলেন, তাদের পরিচয় তুলে ধরা হয় ওই অংশে।
কাস্টমসের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়, ১৮/৮/১৯৪৭ কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম কালেক্টর পদস্থ হলেন জনাব এ ই রাইট। পাকিস্তান হওয়ার পর চিটাগাং কাস্টম হাউসের কালেক্টর পদস্থ করা হলো। তারা বেশির ভাগ ছিলেন পাকিস্তানি, যেমন-এস আলম, এস এম আব্বাস, সাজিদ আলী খান, এ হামিদ, নুরুল ইসলাম, বরিশাল (ইনি বাংলাদেশী, পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হন, বাড়ি বরিশাল), এস এম এলাহী (গজবে এলাহী, ভদ্রলোক খুব রাগী ছিলেন, তাই সবাই তাকে এই উপাধি দিয়েছিল।)
কাস্টমসের ওয়েসবাইটে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরও কালেক্টর পদটি থেকে যায়। সেখানে আরেকজন কালেক্টর ছিলেন আজিজুর রহমান। তার নামের পাশে লেখা, 'রোড এক্সিডেন্টে মারা যান'। একইভাবে আবদুল লতিফ শিকদারের নামের পাশে লেখা, 'স্যারের কাস্টম এক্ট বইটি খুবি ভালো'। লতিফ শিকদারের গ্রামের বাড়ি বরিশাল, তা–ও উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শীর্ষ পদে থাকা এই ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পদবিও উল্লেখ করা হয় ওয়েবসাইটে। আরও উল্লেখ করা হয়, 'আপনাদের জানিয়ে রাখি, বরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লার বাবা ছিলেন পাকিস্তান কাস্টমের সহকারী কালেক্টর'।
দেশের শীর্ষ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েসবাইটে আপলোড হওয়া এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যে রীতিমতো হতবাক চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কাস্টমসের ওয়েবসাইটে সাবেক কালেক্টরদের নামের পাশে যেসব পরিচিত দেওয়া হয়েছে, তা খুবই বিব্রতকর ও কুরুচিপূর্ণ।
সাবেক কালেক্টরদের নামে পাশে বিভ্রান্তিকর লেখার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস পলিসি) মাসুদ সাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রোগ্রামার মো. শামীম উল ইসলাম বলেন, 'chc.gov.bd চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেভেলপ করা ওয়েবসাইট ছিল। পুরোনো ওয়েবসাইটটি একই নামে গত চার মে ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক-এ (এনপিএফ) মাইগ্রেট করা হয়। এই ওয়েবসাইটে হোস্টিং করা হয় গত ৬ মে। বাই ফোর্স হ্যাকিং করে কেউ এলোমোলো তথ্য আপলোড করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। বিষয়টি নজরে আসার পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।'