ভাগাভাগি থেকে করোনা ছড়ানোর শঙ্কায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সিগারেট নিষিদ্ধ
সিগারেট একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করা বন্ধ করতে তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকার। করোনাভাইরাস সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লকডাউনের শুরু থেকে প্রায় দুই মাস ধরে তামাক বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছে দেশটির সরকার। সর্বমহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও তামাকজাত পণ্য বাজারজাতকরণে সরকার কঠোর হয়েছে।
দোকানপাট ও মূল সড়কগুলোতে সিগারেট বিক্রি বন্ধ রাখতে পুলিশ একাধিকবার তল্লাশি করে যাচ্ছে। লকডাউনের তৃতীয় স্তরে তামাকজাত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনতে সহযোগী হবে বলে কেউ কেউ মনে করছে।
তবে দেশটির সমবায় প্রশাসন ও ঐতিহ্যবাহী বিষয়ক মন্ত্রী নোকস্যাজানা দালামিনী-জুমা, যার বিভাগ লকডাউন নিয়ম নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তিনি বিধিনিষেধকে শিথিল করার সময় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তিনি অনলাইনে সংসদ সদস্যসহ বেশকিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সবাই সিগারেট বিক্রি বন্ধ রাখার পক্ষে যুক্তি ও সমর্থন দিয়েছেন।
অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রমাফোসা ২৩ এপ্রিল ঘোষণা করেছিলেন, তামাক বিক্রয় ১ মে থেকে পুনরায় শুরু হতে পারে। দেশটিতে ভাইরাস সতর্কতা স্তর পঞ্চম থেকে শীর্ষ স্তরে স্থানান্তরিত হয়েছিল তখন। তবে পরে সরকার নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ কার্যকর রাখে।
অবশ্য ১৩ মে রমাফোসার লকডাউনে নিয়ম মেনে দোকানিরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছেন।
ফেয়ার ট্রেড ইনডিপেনডেন্ট টোবাকো অ্যাসোসিয়েশন দক্ষিণ আফ্রিকা শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, 'জাতীয় কোরোনাভাইরাস কমান্ড কাউন্সিলের সঙ্গে এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আদালতের আদেশের পরও এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ কেন কার্যকর রয়েছে, তার কারণ জানাতে মঙ্গলবার শিল্প সংস্থা সরকারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন বলেছেন, তাদের মতে দেশটিতে লকডাউন যখন তৃতীয় স্তরে চলে এলে সিগারেট ও অ্যালকোহল বিক্রির নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এদিকে কঠোরতার সঙ্গে লকডাউন ধরে রাখার পক্ষে থাকা দলামিনী-জুমা ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যদের সমর্থন হারাতে শুরু করছেন। তার সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে এবং এই সুযোগে সিগারেটসহ নিষিদ্ধ পণ্যগুলিতে কালোবাজারিরা ব্যবসা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা তাদের।
টোবাকো ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অবৈধ-সিগারেটের বাজার ছিল। যার জন্যে সরকার এক বছরে প্রায় ৭ বিলিয়ন রেন্ড (৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) হারে ট্যাক্স আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
লকডাউন চলাকালে দেশটিতে কয়েকগুণ বেশি দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রায় ৯০ শতাংশ লোক সিগারেট কিনতে চেয়েছিলেন। কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এক অনলাইন সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (পিএলসি) এই নিয়মকে সামঞ্জস্য করার সঙ্গে সঙ্গে তামাক বিক্রি পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে- এই ধারণা নিয়ে এ মাসের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া স্থগিত করেছিল।
দলামিনী-জুমার পক্ষে সর্মথন দিয়ে একজন চিকিৎসক এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী বলেছেন, সিগারেট ভাগ করে মুখে নেওয়ার যে সহজ প্রবণতা রয়েছে মানুষের মধ্যে, তার ফলে অধিক হারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লোকেরা যখন সিগারেট শেয়ার করে, তাতে তাদের মুখের লালা লেগে থাকে। এতে করোনাভাইরাস বহুগুণ ছড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একই পরামর্শ দিয়েছে, ধূমপান সম্ভবত কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে জটিলতা ও ঝুঁকি বাড়ায়।