পানির চেয়ে কম দুধের দাম, বিপাকে খামারিরা
সিরাজগঞ্জের দুগ্ধ খামারিরা পানির চেয়ে কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চুক্তিভিত্তিক ক্রেতা কোম্পানিগুলো দুধ ক্রয় না করায় গত সোমবার বিকেলে জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে প্রতি লিটার দুধ ১৫/২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা না পেয়ে খামারিদের অনেকেই রাস্তায় দুধ ঢেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গতকাল মঙ্গলবারও প্রায় এক লাখ লিটার দুধ অবিক্রিত থেকে যায় বলে খামারিরা দাবি করেছেন। তবে দুধ ও দগ্ধজাত পণ্য বাজারজাতকারী সরকার নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি মিল্কভিটার দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত হওয়ার পর কোম্পানিটি মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে দুধ সংগ্রহ শুরু করেছে।
কিন্তু ওইদিন বিকেল পর্যন্ত অন্যান্য কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় বাঘাবাড়ির খামারগুলোতে উৎপাদিত দুধের অর্ধেকের বেশি অবিক্রিত থেকে যায়।
পাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিএসটিআইয়ের সনদপ্রাপ্ত ১৪ কোম্পানির দুধ সরবরাহ ও বিপননে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দুগ্ধ খামারিরা। নিজেদের খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পেরে তাদের এখন মাথায় হাত।
এদিকে প্রাণ ও আকিজ কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাণ মিল্ক ও ফার্ম ফ্রেশ দুধের উৎপাদন ও বিপণন নিষধাজ্ঞার আদেশ পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
ওই দুই কোম্পানির পক্ষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানির সময় মঙ্গলবার বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
ফলে কোম্পানি দুটি এখন থেকে খামারির কাছ দুধ ক্রয়, প্রক্রিয়াজাত ও বিপনন করতে পারবে।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় গত রোববার মিল্কভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আলট্রা মিল্ক, আফতাব মিল্ক, আড়ং ডেইরি, প্রাণ মিল্ক, আইরান, পিউর, সেইফ মিল্কসহ ১৪টি কোম্পানির দুধ বাজারজাতকরণে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
পরের দিন সোমবার মিল্কভিটার আবেদনের প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগের একটি চেম্বার আদালত।
বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা সমবায় কোম্পানির পরিচালক এবং খামারি সামাদ ফকির জানান, শাহজাদপুরে সমবায়ের সদস্যভূক্ত এক লাখ খামারির প্রায় দেড় লাখ গাভী আছে। দুধ উৎপাদনকারী ১ লাখ খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। মিল্কভিটা প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ১ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। আর বাকি এক লাখ লিটারের বেশি দুধের ক্রেতা প্রাণ, আড়ং, ইগলুর মতো বেসরকারি অন্যান্য কোম্পানি। কিন্তু তারা দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখায় শুধু বাঘাবাড়িতেই ১ লাখ খামারি পানির দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই ক্রেতা না পেয়ে দুধ রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাজারে আধা লিটার বোতালজাত পানীয় জলের দাম ১৫ টাকা। অথচ গত দুদিন বাঘাবাড়িতে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানি খামারিদের কাছ থেকে মানভেদে প্রতি লিটার দুধ ৩৫ থেকে ৬৫ টাকায় সংগ্রহ করে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বাজারজাত করে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমরান হোসেন জানান, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন দুধের চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ৯৪ লাখ মেট্রিক টন। সারা দেশে খামারি রয়েছে প্রায় ১২ লাখ।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত দুধ দিয়ে মোট চাহিদার ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ পূরণ হয়।