মোবাইল চার্জ দিতে ৩০ টাকা!
যশোরের চৌগাছায় ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দিয়ে মোবাইল ফোনে চার্জ দিচ্ছেন গ্রাহকরা। সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবের ৫ দিন পরও চৌগাছায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় মোবাইল ফোন গ্রাহকরা এভাবে নিজেদের সেলফোনে চার্জ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ চৌগাছা জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, আম্পানের তাণ্ডবে ওই অফিসের আওতাধীন চৌগাছা উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রামের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিদুতের থাম (পুল) উপরে বা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতের মেইন লাইনের ওপর গাছপালা পড়ে রয়েছে। শনিবার রাত ৮টার পর পর্যন্ত শুধুমাত্র চৌগাছা সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদ, চৌগাছা বাজারসহ পৌর এলাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। রোববার সকাল থেকে সেসব এলাকায়ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। এমনকি পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়া, জিওলগাড়ী বেলেমাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও সম্ভব হয়নি বিদ্যুৎ দেওয়া।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় গোটা উপজেলার সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে। বিদ্যুতের সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল নেটওয়ার্কের বিপর্যয় হলেও মাঝে মধ্যে মোবাইল টাওয়ারগুলো জেনারেটর দিয়ে চালু করা হচ্ছে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার থেকেই গোটা উপজেলায় মোমবাতিরও সংকট দেখা দেয়। ৫ টাকার মোমবাতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার পর উপজেলার সকল বাজার থেকে মোমবাতি শেষ হয়ে যায়। ফলে মোবাইলের টর্চ লাইটই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে পড়ে।
একদিকে টর্চ লাইট হিসেবে ব্যবহার, অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্কে সচল রাখতে গ্রাহকরা মোবাইল ফোন চার্জ দিতে মরিয়া হয়ে পড়েন। এই সুযোগে জেনারেটরের লাইন থাকা ব্যক্তিরা মোবাইল চার্জের জন্য ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দাবি করতে থাকেন। গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে মোবাইলে চার্জ দিচ্ছেন।
এদিকে শনিবার রাতে চৌগাছা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার সংবাদে রোববার ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রামের মোবাইল গ্রাহকরা শহরে এসে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টায় আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার সাড়ে ৯টার দিকে এসে আবার চলে যায় বিদ্যুৎ। সর্বশেষ দুপুর ১টার দিকে শহরের আগের সরবরাহকৃত অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এতে গ্রামের মোবাইল গ্রাহকরা টাকা দিয়েও মোবাইলে চার্জ দিতে না পেরে হতাশ হয়ে গ্রামে ফেরেন। কেউ কেউ বিদ্যুৎ আসার পর ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে চার্জ দিয়েই বাড়ি ফেরেন।
চৌগাছা সদর ইউনিয়নের বেড়গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (ছদ্মনাম) এসেছেন শহরে নিজের মোবাইলে চার্জ দিতে। তিনি বলেন, আজ পাঁচদিন বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলে চার্জ দিতে পারছি না। শুনেছি চৌগাছায় ২০ টাকার বিনিময়ে মোবাইলে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে। তাই ২০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে মোবাইল চার্জ দিতে এসেছি।
তিনি বলেন, আমার স্বামী মালেশিয়া থাকেন। তিনি সেখান থেকে টাকা পাঠাবেন। কিন্তু কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। কয়েকটি দোকানে ঘুরেছি চার্জ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ রাজি হননি। অবশেষে এক দোকানি থ্রি-পিন সকেট কিনে আনার শর্তে মোবাইলে চার্জ দিতে রাজি হন।
রাবেয়া একটি থ্রি-পিন সকেট কিনে এনে সেখানে ফোন চার্জে দেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যায়। তবুও তিনি খুশি। অন্তত ফোনে কিছুটা চার্জ হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর সোহেল উপজেলার ফুলসারা ইউপির ফুলসারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অনেকগুলো মোবাইল সেট নিয়ে এসেছেন চার্জ দিতে। একজন গণমাধ্যম কর্মীর চেম্বারে নিজের ফোনগুলোতে চার্জ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, গ্রামে পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইলেও চার্জ নেই। সেজন্য এগুলো নিয়ে এসেছি চার্জ দিতে।
চৌগাছা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ জানিয়েছেন, উপজেলায় বিদ্যুৎ লাইনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঠিক কত ক্ষতি হয়েছে, তার হিসেব এখনো করা হয়নি। তবে বিভিন্ন গ্রামে ৬০-৭০টিরও বেশি পুল পড়ে বা ভেঙে গেছে।
তিনি জানান, মেইন লাইনসহ প্রায় প্রতিটি লাইনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই মেইন লাইন মেরামত করে চৌগাছা পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। এখনো অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ পড়ে রয়েছে। এগুলো মেরামত ও পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।