নীল ময়ূর! লাল, নীল সবুজ রঙের নারী-পুরুষ, আছে জয়নুলের দুর্লভ সংগ্রহ!
কচ্ছপের মতো উত্তল গোলাকৃতির পিঠ। সে পিঠে আঁকা লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের নারী-পুরুষের ছবি। পুরুষদের শরীর নীল আর মেয়েদের শরীর কখনো হলুদ, কখনো সাদা। কোনোটায় তিনজন নারী, কোনোটায় আবার দুই নারী-এক পুরুষ, কোনোটায় আবার চার-পাঁচজন নারী। প্রতিটি নারীর পরনেই রয়েছে আবহমান বাংলার চিরাচরিত লাল শাড়ি আর পুরুষের পরনে ধুতি।
সেই সাথে আছে ধান, নৌকা, ময়ূরের মতো গ্রামবাংলার বিভিন্ন উপাদানের ছবি। কাঁচের বাক্সে রাখা চিত্রিত এই মাটির পাত্রগুলোকেই বারবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। কাঁচের ওপরে লেভেল টানানো। তাতে লেখা-ফরিদপুরি লক্ষ্মীসরা, সুরেশ্বরী লক্ষ্মীসরা, জয়া-বিজয়া লক্ষ্মীসরা ও লক্ষ্মীনারায়ণ লক্ষ্মীসরা। আর পাশেই সংগ্রাহকের নামের জায়গায় লেখা, 'শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন'। নামটা দেখেই যেন সরাগুলোর প্রতি মুগ্ধতা বেড়ে গেলো। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রহ এগুলো!
কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়নুল স্যারের অনেক সংগ্রহ এই প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই ১৯৫০-৬০ এর সালের ফরিদপুরি, সুরেশ্বরী, জয়া-বিজয়া, লক্ষ্মীনারায়ণ সরাগুলো।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন (বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের) লক্ষ্মীসরায় লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন। বৈষ্ণব, শাক্ত ও শৈব মত অনুসারে সরায় নানা রঙ আর তুলির টানে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা দেবদেবীর চিত্র। সে-ই বাঙ্গালী নারী-পুরুষের ছবিগুলো মূলত সেসব দেবদেবীরই প্রতিকৃতি।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কনিষ্ঠ পুত্র ময়নুল আবেদিন জানান, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ আরো অনেক জায়গা থেকে মানুষ তার বাবার কাছে এসব সরা নিয়ে আসতো, তিনিও যেখানে যা পেতেন সংগ্রহ করতেন। অনেক সরা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যা আছে সেগুলোর অবস্থা খুব খারাপ।
ময়নুল ছোটবেলা থেকেই বাবাকে এসব সংগ্রহ করতে দেখেছেন। শুধু মৃৎশিল্প নয়, বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে যত রকম লোকজ জিনিসপত্র আছে (মাটির জিনিস তার একটা বিরাট অংশ)–কাঠের জিনিস, গয়নাগাটি, বাদ্যযন্ত্র – এগুলো সব সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং উত্তরবঙ্গ থেকে সংগ্রহ করতেন মাটির তৈরি নানা জিনিস।
ময়নুল আবেদিন 'সংগ্রাহকের কথা' বর্ণনায় লিখেছেন, জয়নুল আবেদিন সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার দইয়ের হাঁড়ি সংগ্রহ করতে। নানারকম আকার ও নকশার এবং হাতের ছাপের ডিজাইন করা প্রায় গোটা পঁচিশ-তিরিশখানা হাঁড়ি তাদের বাসায় ছিল একসময়। তবে পোড়ামাটির না হওয়ায় সবগুলোই গলে গেছে!
তরুণ ঘোষের পুঁথি লেখা সরাচিত্র আর মোটা পুতুল
প্রদর্শনীর আরেক সংগ্রাহক বাংলাদেশের শিল্প নির্দেশক ও পরিচালক তরুণ ঘোষ। জয়নুল আবেদিনের পর এই প্রদর্শনীতে তারই সবচেয়ে পুরনো নিদর্শন আছে। এগুলোর সময়কাল গত শতকের সত্তরের দশকে।
তরুণ ঘোষের মতে, এ প্রদর্শনীতে দুটো শিল্পকর্ম তার সবচেয়ে ব্যতিক্রমী এবং অনন্য। একটি হলো, পুঁথি লেখা সরাচিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন রাজবাড়ি থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। অনেক খোঁজ করেও পরে আর পাননি। আরেকটি হলো একটি মেয়ে পুতুল। পুতুলটির বিশেষত্বই হলো, এটি একটু মোটা এবং গোদাকৃতির। যা সাধারণত হয়না পুতুলের ক্ষেত্রে। বগুড়ার সেরিয়াকান্দি নামক একটা জায়গায় পেয়েছিলেন তিনি পুতুলটি।
আমার একটা হাত চাই, একটা ঘর চাই..
এই প্রদর্শনীতে একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো পাগলা মাজার মানতের সামগ্রী। মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক প্রদর্শনী হলেও, এই মানতের সামগ্রী অনেকের কাছেই একেবারে নতুন মনে হবে।
সংগ্রাহক ইমরান উজ জামান জানান, বাংলাদেশের দুটি মাজারেই কেবল তিনি এই সামগ্রীগুলো দেখেছেন। একটি হলো কালিয়াকৈর পাগলা মাজার, আরেকটি হলো ঘোড়া পীরের মাজার। এই খণ্ড খণ্ড গোলাপী সামগ্রীগুলো দিয়েই ভক্তরা মানত করে যায় বা শিন্নি দিয়ে যায়। কেউ হয়তো এর সাথে টাকা-পয়সা দেয়, কেউ শুধু এই মাটির তৈরি সামগ্রীগুলোই দান করে যায়। কারও হাত নেই, সে হয়তো মাটির তৈরি হাত দিয়ে যায় একটি, কারও বউ নেই, সে বউয়ের জন্য মুখের আকৃতি দিয়ে যায়, ঘর লাগলে মাটির ঘর দিয়ে যায়। শিন্নি শেষে, এগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। যেকারণে এগুলো কাচামাটির তৈরি।
ইমরানের মতে, এই সামগ্রীগুলো একশো বছরের পুরোনো হবার কথা। তবে স্থানীয়দের দাবি, এটি তাদের দুইশো বছরের পুরোনো ঐতিহ্য।
প্রসঙ্গত, ইমরান উজ জামান একজন সাংবাদিক, লেখক, পরিব্রাজক ও গবেষক। তার গবেষণার ক্ষেত্র বাংলাদেশের লোকমেলা। ভিজুয়াল কন্টেন্ট তৈরিকল্পে ২০০৯ সাল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করেন ইমরান উজ জামান।
আছে হারিয়ে যাওয়া শখের হাঁড়ি
একসময় রাজশাহীতে কনের বিদায়ের সময় কিংবা কন্যার প্রথম সন্তান হওয়ার পর বাপের বাড়ি থেকে যেসব উপহার পাঠানো হতো, তার প্রধান একটি অনুষঙ্গ ছিল শখের হাঁড়ি বা শখের চুকাই। এই হাঁড়িতে করে তারা বিভিন্ন সাজসজ্জা সামগ্রী বা ব্যক্তিগত জিনিস নিয়ে আসতো।
এছাড়া শখের হাঁড়ি ব্যবহার করা হতো কুটুমবাড়িতে মিষ্টান্ন বা খই-চিড়া-মুড়ি-কদমা-চিনির সাজ ইত্যাদি মন্ডা-মিঠাই নেওয়ার জন্য। এমনকি প্রদর্শনীর অন্যতম সংগ্রাহক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে ময়নুল আবেদিন 'সংগ্রাহকের কথা' বর্ণনায় জানিয়েছেন, 'রাজশাহী অঞ্চলে শখের হাঁড়ি যেখানে বানানো হয়, সেখানে বাবা বেশ কয়েকবার গিয়েছিলেন। আমাদের বাসায় শখের হাঁড়িতে করে মিষ্টির চেয়ে বেশি আসত রাজশাহীর খাজা!'
প্রদর্শনীর ডানদিকে মাঝ বরাবর রাখা হয়েছে লাল-হলুদ জমিনে সাদা-কালো লাল, সবুজ রঙে সরিষা ফুল, রঙিন মাছ, চিরুনি, পাখি ও পদ্মের মোটিফে আঁকা হাঁড়ি। হাঁড়িগুলো মূলত অধ্যাপক নিসার হোসেন ও ইমরান উজ জামানের সংগ্রহ থেকে আনা।
'পঞ্চনাগঘট' 'অষ্টনাগঘট'…
প্রদর্শনীর একটি জায়গাজুড়ে আছে নানারকম সাপের ফণীযুক্ত এসব ঘট। ঘটকে যেমন একাধারে গর্ভবতী নারী শক্তির প্রতীক রূপে কল্পনা করা হয়, তেমনি তা ফসলের উর্বরতারও প্রতীক। দক্ষিণবঙ্গে বিশেষত ফরিদপুর-বরিশাল অঞ্চলে মনসাকে প্রতিমার পরিবর্তে ঘটের মাধ্যমে পূজা করা হয়। সরার মতো এখানে একাধিক দেবদেবীর উপস্থিতি থাকেনা। কেবল সাপ এবং মনসার মুখমন্ডলের প্রতিকৃতিই এখানে স্থান পায়।
নাগঘটে এক বা একাধিক ফণাযুক্ত সাপের উপস্থিতি দেখা যায়। ফণার সংখ্যার উপরে ঘটের নামকরণ আলাদা হয়, যেমন—পাঁচটি নাগের ফণাযুক্ত ঘট 'পঞ্চনাগঘট' বা আট সাপের ফণাযুক্ত ঘটকে বলা হয় 'অষ্টনাগঘট'। এটি তৈরি করতে আলাদা করে নাগমূর্তি বানিয়ে নিতে হয়। পরে একে ঘটের গায়ে জুড়ে দেওয়া হয়। তবে তরুণ ঘোষ জানান, একবার এক পুকুর থেকে তিনি পেয়েছিলেন প্রায় একশো বছরের পুরোনো ঘট। লম্বায় সেটি ছিল অনেক বড় এবং তার গায়ে ছিল ২০-৩০টি সাপের ফণী। তার বিশাল সংগ্রহের মাঝে এটি একটি অন্যতম দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন বলে তিনি মনে করেন।
তবে প্রদর্শনীতে যেসব ঘট রয়েছে তারমধ্যে অধ্যাপক নিসার হোসেনের কিছু এবং তরুণ শিল্পী ও গবেষক নবরাজ রয়ের রয়েছে দুটি ঘট। ফরিদপুর থেকে ২০১৮ সালে ঘট দুটি সংগ্রহ করেছিলেন নবরাজ রয়। ওদিকে নিসার হোসেনের ঘটগুলো বেশ পুরোনো। সমসাময়িক এবং পুরোনো ঘটগুলো দিয়ে ঘটের বিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া তার সংগৃহীত বেশকিছু পুতুল, ফলমূলের নিদর্শন পাওয়া যায় প্রদর্শনীতে।
নবরাজ রয়ের ছাঁচ ও যন্ত্র
খেলনা পুতুলের পাশাপাশি প্রদর্শনীর আরেক নিদর্শন হলো ছাঁচ ও যন্ত্র। পুতুল সাধারণত দুই ধরনের হয়। টেপা পুতুল, যা কিনা টিপে টিপে বানানো হয়, অপরদিকে ছাঁচে গড়া পুতুল পরিপূর্ণ একটা পুতুলের ছাঁচ দিয়ে দেয় একবারে। এই ছাঁচ দিয়ে প্রতিমাদের মুখগুলো তৈরি করে। আর যন্ত্র হলো, নিজেদের সুবিধার্থে বানানো কিছু সামগ্রী। যা দিয়ে পিঠার সাজ, বা একধরনের মাটির ডাইস, যা দিয়ে কাঠামো দেওয়া যায়।
তিনি জানান, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, উত্তরবঙ্গে একটা সময় টেপাপুতুল তৈরি হতো বেশি। এখন অবশ্য ছাঁচের পুতুল ঢুকে গেছে। ফরিদপুর-রাজবাড়ি অঞ্চলে টেপাপুতুল নেই, সবসময়ই তারা ছাঁচের পুতুল তৈরি করে।
নবরাজের সমসাময়িক ১০টি সরা
গ্যালারির একপাশের বিশাল দেওয়াল জুড়ে রাখা হয়েছে নানা রঙবেরঙের লক্ষ্মীর সরা। সেখানে নবরাজ রয়ের প্রায় ১০টির মতো সমসাময়িক সরা আছে। কোনো সরায় লক্ষ্মী একা এবং বাহন হিসেবে পায়ের কাছে পেঁচা আঁকা। কোনো সরায় যুগল লক্ষ্মী-নারায়ণ আঁকা, কোথাও আবার নিচে একা লক্ষ্মী, উপরে দেবী দুর্গা অসুর বধরত। কোনোটায় আবার রাধাকৃষ্ণ থাকে মাঝে। বাংলাদেশের চিত্রিত সরাকে ঢাকাই, ফরিদপুরী, আচার্য বা গণকী এবং সুরেশ্বরী—এই চার রীতিতে ভাগ করা হয়। এই চার রীতির সরাগুলোই বেশি বিক্রি হতো বা হয় বলে এই চারটি রীতিকেই প্রধান ধরা হয় বলে জানান নিসার হোসেন।
নবরাজের সংগ্রহে এছাড়াও আছে শলা, পাখি, মুখোশ, কাঠের পুতুলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী লোকজ শিল্পকর্ম। বাড়ির পাশে মন্দির হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন কী করে মাটির কাজ হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করার পর, নিজের ছোটবেলা আর পাঠ্যপুস্তকের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারেন। চারুকলায় ভর্তি হবার পর ২০১৩ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের লোকশিল্প ও লোকশিল্পীদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করা শুরু করেন নবরাজ রায়। তখনই নিজের একটা সংগ্রহ গড়ে তুলেন।
নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়তে হয়…
তবে সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান নবরাজ।
'দেখা যায়, ঢাকা থেকে একটা ইনফরমেশন নিয়ে যাই। গিয়ে শুনি সেটা ঐ অঞ্চলে নেই। আরেক অঞ্চলে পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে দেখি ঐ অঞ্চলের জিনিসের সাথে এ অঞ্চলের মিল নেই তেমন। তখন আবার ইনফরমেশন নিয়ে আরেক জায়গায় যাওয়া লাগে। এমনটা হয়,' বলেন তিনি।
তাছাড়া এই পালরা থাকে মূলত একটু প্রান্তিক বা শহর থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে। আবার এই শিল্পকর্মগুলো বানানো হয় মূলত কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে। যেমন দুর্গাপূজা, বাংলা নববর্ষ, মনসাপূজা ইত্যাদি। আর তখন থাকে আষাঢ়–শ্রাবণ মাস। ফলে, নদী, নৌকা, ঝড়-তুফান নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় প্রায়ই। একবার নাকি ৬ হাজার টাকার কেনাকাটা করে ফিরছিলেন, মাঝে ঝড়বৃষ্টিতে বাস নষ্ট, কার্টুন ভিজে একাকার। সেই সাথে কিছু জিনিস ভেঙ্গেও গিয়েছিল সেবার।
পিঠের ওপর লেজ ওঠানো বাঘ
এই প্রদর্শনীতে খেলনা, ছাঁচ, মনসাঘট ছাড়াও একটি ব্যতিক্রমী বাঘের কথা উল্লেখ করেন নবরাজ রয়। বাঘটির বিশেষত্ব হলো, এর পিঠের ওপর লেজ ওঠানো, যা সাধারণত দেখা যায়না। এর পেছনের গল্প জানা না গেলেও, একে বেশ অন্যরকম একটি নিদর্শন বলে মনে করেন নবরাজ। এছাড়া ফরিদপুরে ভোজনধাঙ্গা নামের একটি জায়গা থেকে চার-পাঁচটি পুতুল আছে, যার সময়কাল হবে নব্বইয়ের দশক। প্রদর্শনীতে তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো, লক্ষ্মীপুরের পারিতোষ পালের একটি গরু। যার কাঠামো সচরাচর দেখা যায় না।
ষাঁড়ের লড়াই…
গ্যালারির ডানদিকে কোণায় দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো মোটাতাজা ও বলবান ষাঁড়। পোড়ামাটির এই ষাঁড়গুলো বানানোর প্রেক্ষাপট কোনো ধর্মীয় কারণে নয়। বরং এর পেছনে আছে সামাজিক রীতি।
একসময় এদেশে ষাঁড়ের লড়াই একটি প্রসিদ্ধ খেলা হিসেবে প্রচলিত ছিল। লড়াই করার জন্য ষাঁড়কে আলাদাভাবে লালন-পালন করা হতো। মাঠে চলতো ষাঁড়ের লড়াই আর সে লড়াইকে ঘিরে চলতো মেলা। বাংলার আবহমান রীতি অনুযায়ী সেই মেলায় পাওয়া যেত বিভিন্ন মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়ি পাতিল ইত্যাদি দ্রব্যাদি। নিসার হোসেন জানান, 'গ্রামের এই লড়াইয়ে যারা জয়ী হতো, তারাই স্মারকস্বরূপ মেলা থেকে একটা বড় ষাঁড় কিনে নিয়ে যেত। এরপর বাড়ির দরজায় বা ঘরের মধ্যে তা শো পিস হিসেবে সাজিয়ে রাখতো। যেকারণে ষাঁড়গুলোর রঙ এবং আকৃতিও বেশ শক্তিশালী বলিষ্ঠবান হয়।'
প্রায় এগারো জন সংগ্রাহকের সংগ্রহ
গত ২৯ জুলাই ঢাকার ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী। 'বাংলাদেশের লোকশিল্প: চিত্রিত মৃৎশিল্প' প্রদর্শনী। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা টেপাপুতুল থেকে শুরু করে শখের হাঁড়ি, লক্ষ্মীসরা, মনসাঘটসহ নানারকম মাটির তৈরি শিল্পকর্মের দেখা মিলবে এই প্রদর্শনীতে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনসহ প্রায় এগারো জন সংগ্রাহকের থেকে নিয়ে সারাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলার নিদর্শনগুলো এখানে রাখা হয়েছে। তাদের কেউ হয়তো এদেশের খ্যাতিমান শিল্পী, কেউ গবেষক, কেউবা নবীন গবেষক ও শিল্পী।
শিল্পের বিবর্তন তুলে ধরতে জ্ঞানী-গুণী নানা তরুণ ও প্রবীণ শিল্পী, গবেষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন শিল্পকর্ম। বেঙ্গল আর্টস প্রোগ্রামের আয়োজনে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এই প্রদর্শনী চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।