আয় বাড়াতে নির্ধারিত ডলার রেট মানছে না বড় রপ্তানিকারকরা
রপ্তানি আয়ের জন্য নির্ধারিত ডলার রেট মেনে চলছে না বড় রপ্তানিকারকরা। বরং আমদানিকারকদের সাথে সরাসরি বেশি দামে ডলার লেনদেন চালাচ্ছে তারা।
ফলস্বরূপ, আমদানিকারকদের দ্বারা কেনা ডলারের দাম কাগজে কলমে কম হলেও তা প্রকৃতপক্ষে বেশি, জানা গেছে শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রে।
বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) চলতি মাসের শুরু থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৮.৫ টাকা করেছে।
কিন্তু রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও বেশি হওয়ায় রপ্তানিকারকরা এখনও সন্তুষ্ট নন।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডলার বিক্রির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেছেন, রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারকরা নিজেদের মধ্যে ডলার রেট প্রায় ১১২-১১৩ টাকা নির্ধারণ করে নেয়।
তারপর, আমদানিকারকের বিল নিষ্পত্তিকারী ব্যাংকে রপ্তানিকারকের করেসপন্ডেন্ট ব্যাংক যখন ডলার বিক্রি করে, তখন তা আন্তঃব্যাংক রেটেই করতে বলা হয়।
উভয় ব্যাংকই এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত; কিন্তু ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এ কাজটি চালিয়ে যায় তারা।
প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে, আগের চুক্তি অনুসারে আমদানিকারক ওই রপ্তানিকারককে ডলার প্রতি অতিরিক্ত ৩ বা ৪ টাকা আলাদাভাবে পরিশোধ করে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ডলার সংকট থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে তারা আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করছে।
নিজ ব্যাংকের উদাহরণ টেনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, এক ব্যবসায়ী কয়েক দিন আগে তার কাছে যেয়ে নিজের এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা অ্যাকাউন্ট থেকে রপ্তানি আয়ের ৫ মিলিয়ন ডলার দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকে বিক্রি করতে বলেছিলেন।
"ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমাদের ব্যাংকের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আর তাছাড়া, একজন বড় রপ্তানিকারক হিসেবে তার যে মর্যাদা, সেখানে তার এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে আমরা ১০৮ টাকা আন্তঃব্যাংক রেটে ডলার বিক্রি করি," বলেন তিনি।
"তবে, আমরা যদি এসব ডলার আমদানি নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের কিছু মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকবে," যোগ করেন তিনি।
পোশাক খাতের একটি অ্যাসোসিয়েশনের একজন সিনিয়র নেতা আমদানিকারকদের কাছে বেশি দামে ডলার বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, ব্যাংকগুলো বেশি রেটে রেমিটেন্স সংগ্রহ করছে।
"অনেক ব্যাংক রেমিটেন্স ডলার কিনতে ১১১-১১২ টাকা অফার করছে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এসেই সব সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। বর্তমানে বড় রপ্তানিকারকরা বেশি রেটে ডলার বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু, ছোট রপ্তানিকারকরা নির্দিষ্ট রেটেই ডলার বিক্রি করছে," টিবিএসকে বলেন তিনি।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রেমিটেন্সের জন্য ডলার রেট ছিল ১০৮ টাকা, যেখানে রপ্তানিকারকদের জন্য তা ছিল ৯৯ টাকা। এরপর থেকে বাফেদা ও এবিবি রপ্তানিকারকদের জন্য ১২ বার ডলার রেট বাড়িয়েছে এবং রেমিটেন্সের জন্য ডলার রেট ছয় বার পরিবর্তন করেছে।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে; অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ব্যাংক সরকার নির্ধারিত এ রেট উপেক্ষা করে ১১৪-১১৬ টাকায় আমদানিপত্র (এলসি) খুলছে।
বাজারে ডলারের উচ্চ হারের কারণে আমদানি ব্যয় মেটাতে জুলাইতে রিজার্ভ থেকে ১.১৪ বিলিয়ন অফলোড করতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। ধারাবাহিকভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এ পরিস্থিতি; দেশের আমদানি ব্যয় পরিচালনায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।