ঝড়ে জয়পুরহাটে সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্থ; বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা
জয়পুরহাটের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে সদর, ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি-ঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতের প্রলয়ংকারী এই ঝড়ে নিহত হয়েছেন ৪ জন মানুষ।
বুধবার জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঝড়ে ক্ষেতলাল উপজেলা খলিশাগাড়ি গ্রামে দেয়াল চাপাপড়ে মারা গেছেন জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৮) ও তার দুই ছেলে নেওয়াজ (৮) আর নিয়ামুল (৩)। এ ছাড়া কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামে বাড়ির ওপর গাছ ভেংগে পড়লে দেয়াল চাপায় মারা যান মৃত সালামত আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম (৭০) ।
জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্থদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি অটো রাইস মিল, পোলট্রি ফার্ম, ধানক্ষেত ও বাড়ি-ঘর নষ্ট হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকার।
জয়পুরহাটের মা রেজিয়া এগ্রো লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান দুলু দাবি করেছেন, লোহার কাঠামোতে তৈরি তার অটো রাইস মিলটি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে আছে প্রায় দেড়কোটি টাকা মূল্যের ২শ টন উন্নত মানের চাল।
তিনি জানান, ব্যাংক লোন নিয়ে চালানো এ মিলটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার পক্ষে আর এ প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, "সরকার যাদি আমাকে সহযোগিতা না করে তা হলে আমাকে পথে বসতে হবে।"
ক্ষেতলালে একটি পোলট্রি ফার্ম সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় প্রায় ৪২ হাজার মুরগি মারা গেছে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাইকুল ইসলাম জানান, সব মিলিয়ে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে জয়পুরহাটের তিন উপজেলায় ৪০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বোরো ধানেও ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে ডুবে গেছে অনেক ধানসহ বোরো ক্ষেত আর বৃষ্টির সঙ্গে পড়া শিলার কারণে অনেক স্থানে ঝরে গেছে পাকা ধান। ঝড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অনেক গ্রামের মানুষ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ জাকির হোসেন জানান, ঝড়ে নিহতদের ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, "ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি-ঘর নির্মাণে প্রয়োজনে দুই বান্ডেল করে টিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা দেয়া হবে। একইসঙ্গে শুকনা খাবারও দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্থদের।"
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স.ম মেকতাহুর বারি জানান, বৃষ্টির পানিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ তলিয়ে আছে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে লাগানো বোরো ধান। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে যদি জমি থেকে পানি নেমে না যায় তবে ক্ষতি হতে পারে ধানের।
কালাই উপজেলার বাকরা গ্রামের চাষী আব্দুল মান্নান (৭০) দাবি করেন, তার দশমিক ৮ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ন পানির নিচে ডুবে আছে। এতে তার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, "যদি আর বৃষ্টি না হয় তবে জমি থেকে পানি সরতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৭দিন।"
একই এলাকার আরেক চাষী এমরান ফারুক দাবি করেন, তার প্রায় এক হেক্টর জমি এখন পানির নিচে।
তিনি বলেন, "আশা ছিলো প্রতি হেক্টর জমি থেকে সাড়ে ৬ টন করে ধান পাবো কিন্তু সবই নষ্ট হয়ে যেতে পারে যদি জমি থেকে পানি না বের হয়। তবে যে অবস্থা দেখছি তাতে পানি থাকতে পারে আরও ৭দিন।"