পাসপোর্ট ছাড়াই ইমিগ্রেশন সুবিধা দেবে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর!
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হতে যাচ্ছে। কেননা আগামী বছরের শুরু থেকে বিমানবন্দরটিতে চালু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ইম্রিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স সুবিধা। এতে করে দেশটি থেকে পাসপোর্ট ছাড়াই শুধু বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে যাত্রীরা বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন।
গত সোমবার সংসদীয় অধিবেশনে সিঙ্গাপুরের যোগাযোগমন্ত্রী জোসেফিন তেও এই তথ্যটি নিশ্চিত করেন। একইসাথে এ উদ্যোগের কারণে দেশটির আইনে বেশকিছু পরিবর্তন এনে নতুন ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট পাশ করা হয়েছে।
অধিবেশনে জোসেফিন তেও বলেন, "সিঙ্গাপুর বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি হতে যাচ্ছে যারা পাসপোর্ট ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে।"
যদিও ইতিমধ্যেই চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন, এর ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টের স্বয়ংক্রিয় লাইনে রয়েছে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ও ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম।
তবে জোসেফিন তেও জানান, প্রযুক্তিটি ব্যবহারের ফলে বারবার যাত্রীদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদর্শনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে। এতে করে জায়গায় জায়গায় ভ্রমণ সংক্রান্ত নথি উপস্থাপন করতে হবে না।
এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিটি অথেনটিকেশনের ক্ষেত্রে একক টোকেন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এই টোকেনটিই পরবর্তীতে বোর্ডিং, ব্যাগ সংগ্রহের মতো জায়গায় কাজে লাগানো হবে।
তবে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। কেননা সিঙ্গাপুরের বাইরের বেশিরভাগ বিমানবন্দরগুলোতেই পাসপোর্ট ফ্রি ক্লিয়ারেন্স সুবিধা নেই। তাই সেক্ষেত্রে ঐসব বিমানবন্দরের জন্য আপাতত পাসপোর্ট সাথেই রাখতে হবে।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরকে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও উন্নত এয়ারপোর্টের একটি। এতে রয়েছে নিয়মিত মোট ১০০ এয়ারলাইন্সের যাতায়াত। বিমানবন্দরটি থেকে বিশ্বের মোট ১০০ টি দেশের ৪০০ শহরে যাতায়াত করা যায়।
গত জুন মাসেই বিমানবন্দরটিতে মোট ৫২ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে করোনা শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ।
বর্তমানে চাঙ্গি বিমানবন্দরে মোট চারটি টার্মিনাল রয়েছে। ক্রমবর্ধমান যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এতে পঞ্চম টার্মিনাল যুক্তের কাজ চলছে।
জোসেফিন তেও বলেন, "আমাদের ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে অবশ্যই ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের যাতায়াত দক্ষমতার সাথে ব্যবস্থাপনায় সক্ষম হতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিতের সাথে সাথে কার্যকরীভাবে ক্লিয়ারেন্স প্রদান করতে হবে।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন শীঘ্রই ভালো উপায় হতে পারে।
২০১৮ সালে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বায়োমেট্রিক 'স্মার্ট গেটস' টানেলস চালু হয়েছে। এতে করে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে যাত্রীর পরিচয় শনাক্ত করা যায়। একইসাথে যাত্রীরা পাসপোর্টের পরিবর্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেইস স্ক্যান ব্যবহার করে অথেনটিকেশন করতে পারে।
শুধু চাঙ্গি কিংবা দুবাই নয়; বরং হংকং, টোকিও, দিল্লি, লন্ডন ও প্যারিসের বিমানবন্দরেও ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি চালু রয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে যাত্রীরা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের অনুমদিত ডিজিটাল আইডি কার্ডও ব্যবহার করছে। এতে করে মোবাইল ফোনে পাসপোর্টের ডিজিটাল ভার্সন ব্যবহার করে নিরাপদে ভ্রমণ করতে যাত্রীরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছর ধরে ইউনাইটেড, ডেল্টা কিংবা আমেরিকান এয়ারলাইন্স পরীক্ষামূলকভাবে 'বায়োমেট্রিক চেক ইন সিস্টেম' চালু করেছে। এতে করে বোর্ডিং কিংবা ব্যাগ সংগ্রহ আগের থেকেও বেশ সহজ হয়েছে।