দেশের উন্নয়ন হলেও এর সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
গত ৫০ বছরে দেশে উন্নয়নের আদর্শ স্থাপন হলেও আয় ও ব্যয়ে বৈষম্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা, দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি বলে মন্তব্য করেছেন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কেআইবি অডিটোরিয়ামে সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি, বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত 'বাংলাদেশস ডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ অ্যান্ড দ্য প্যারালাল রিয়েলিটিস' শীর্ষক সংলাপে তিনি বলেন, "গত কয়েক বছরে দেশে আলির্গাক সমাজের উদ্ভব হয়েছে, যাদের কাছে বিশাল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, আবার তাদের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতাও অনেক।"
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১.৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে নেমে আসলেও এ সময়ে আয় বৈষম্য বেড়েছে ৯ শতাংশ।
অতিধনী ১০ শতাংশ মানুষের কাছে মোট আয়ের ৪১ শতাংশের বিপরীতে অতি দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের কাছে যাচ্ছে মোট আয়ের মাত্র ১.৩১ শতাংশ।
আয়ে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১২ বছরে ব্যয় বৈষম্যও বেড়েছে অন্তত ৪ শতাংশ।
এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, "জিডিপি, জাতীয় আয়, রপ্তানি রেমিট্যান্স, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব সূচকে উন্নতি হলেও সবাই এর সমান ভাগিদার হতে পারেন নি। খাতভিত্তিক, জনসংখ্যাভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে অনেকেই এই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।"
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকায় পিছিয়ে থাকা লোকজন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আওয়াজ তুলতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যেও সামষ্টিক অর্থনীতির কয়েকটি সূচকে বেশ অসামঞ্জস্য রয়েছে।"
তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ শতাংশে রয়েছে, যা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ৩০ শতাংশ থেকে অনেক কম।
স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২ শতাংশের কম, শিক্ষায় ১ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তায় ২.৫২ শতাংশ বরাদ্দকে অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে শোভন কর্মসংস্থানের অভাব, আঞ্চলিক বৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবেশের ঝুঁকি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা, মূল্যবোধের অধপতন ও দুর্নীতির বিস্তারকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তিনি বলেন, "শোভন কর্মসংস্থান না থাকায় শিক্ষিত বেকার বেড়েছে। এর ফলে অনেকেই কম মজুরিতে কাজ করছেন।"
অবকাঠামো উন্নয়নেও বৈষম্য রয়েছে মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ছোট দেশ হলেও অনেক এলাকা বরাদ্দে পিছয়ে আছে। এর ফলে ভারসাম্য উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, "দুর্নীতির বিস্তার, স্থানীয় পর্যায়ে অদক্ষতার কারণে সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না।"
এই সমস্যার সমাধানে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারসহ মোট ১১টি সুপারিশ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, "সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার জরুরি।"
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যন অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ মেম্বার, এনজিও ও ব্যক্তিখাতের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেছেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই, সংগ্রাম করছি। দেশটিকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছি। আমরা একদিকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে টাকা পাচারকারীরা এই দেশ থেকে টাকা নিয়ে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মালেশিয়াকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছে।"