অর্থপাচারের মামলার জিজ্ঞাসাবাদে ড. ইউনূসকে দুদকে তলব
গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে স্বশরীরে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগামী ৫ অক্টোবর তাদেরকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সুত্রে জানা যায়, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, 'উপর্যুক্ত বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য ৫ অক্টোবর সকাল ১২.৩০ ঘটিকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্তকাজে সহযোগীতা করার আপনাকে অনুরোধ করা হলো।'
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ১৩ জনের মধ্যে ড. ইউনূসসহ কয়েকজনকে ৫ অক্টোবর ডাকা হয়েছে। বাকিদের ৪ অক্টোবর ডেকেছে দুদক।
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন: ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
এছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করলেও দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করেছেন বলে ড. ইউনূসকে দুদকে ডেকেছেন। 'আসা না আসা সেটা তার ব্যাপার।'
ড. ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, 'তাকে হয়রানি কেন করা হবে? শ্রমিকদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কারখানা পরিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক তদন্ত করেছে এবং মামলা হয়েছে। এটাকে হয়রানি কেন বলছেন?'
অন্যদিকে দুদকের উপ-পরিচালক ও মামলার বাদী গুলশান আনোয়ার প্রধান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তিনি তলবের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
এর আগে গত ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদক জানায়, আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে 'অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা' পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি 'আত্মসাৎ ও অর্থ পাচার' এর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করা হয়েছে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে দুদকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশিরভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক। শুধু তাই নয়, আইএলওতে দেওয়া শ্রমিকদের অর্থপাচারের অভিযোগেরও তদন্ত চায় সংস্থাটি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, পুরো বিষয়টির বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন। কারণ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শেয়ার দেওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন ড. ইউনূস।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। এখানেও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দুদকেরে কাছে পাঠানো চিঠিতে আরো বলে, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিতের অভিযোগ এনে গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা করেন তারই অধীনস্ত শ্রমিকরা।
সম্প্রতি ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা ৪৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে আবারও আলোচনায় আসেন ড. ইউনূস। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে করা হয় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন। এর পরই প্রশ্ন ওঠে মামলার রফা-দফার প্রক্রিয়া নিয়ে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টনে অনিয়মের দায়ে ঢাকার শ্রম আদালতে ড. ইনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার এখন চলমান।