বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে যাচ্ছেন ড. ইউনূস
গ্রামীণ টেলিকমের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে (৫ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে হাজির হবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার দুপুরে (৪ অক্টোবর) তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে জানান।
তিনি বলেন, "ড. ইউনূস চিঠি দিয়ে দুদককে জানিয়েছেন তিনি ৫ অক্টোবর তাদের কার্যালয়ে যাবেন।"
গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে সশরীরে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগামী ৫ অক্টোবর তাদেরকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সুত্রে জানা যায়, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়, "উপর্যুক্ত বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য ৫ অক্টোবর সকাল ১২.৩০ ঘটিকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্তকাজে সহযোগীতা করার আপনাকে অনুরোধ করা হলো।"
আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি 'আত্মসাৎ ও পাচারের' অভিযোগ গত ৩০ মে মামলা করে দুদক।
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "ড. ইউনূস দেশের বাইরে জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে ছিলেন। দুদকের নোটিশের বিষয়ে জানার পর গত ১ অক্টোবর দেশে ফিরে এসেছেন। গতকাল (৩ অক্টোবর) দুদককে চিঠি দিয়ে উনি জানিয়ে দিয়েছেন তাদের কার্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকার কথা।"
"দুদক আগে বলেছিল তাদের কর্মকর্তারা ডা. ইউনূসের সাথে দেখা করতে পারবেন, তাকে কার্যালয়ে আসতে হবে না। কিন্তু ডা. ইউনূস বলেছেন, যদি এমন হয় তবে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। যেহেতু দুদক লিখিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে, তাই তিনি উপস্থিত থাকবেন," বলেন তিনি।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ড. ইউনূসসহ অন্য আসামিদের তলব করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
"ড. ইউনূস আসবেন কি আসবেন না সেটা তার ব্যাপার। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি কমিশনের কাজ নয়," বলেন তিনি।
মামলা করবে কি করবে না সে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তা যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকে ডাকবেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে দুদকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশিরভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক। শুধু তাই নয়, আইএলওতে দেওয়া শ্রমিকদের অর্থপাচারের অভিযোগেরও তদন্ত চায় সংস্থাটি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, পুরো বিষয়টির বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন। কারণ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট শেয়ার দেওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন ড. ইউনূস।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। এখানেও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দুদকেরে কাছে পাঠানো চিঠিতে আরো বলে, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিতের অভিযোগ এনে গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা করেন তারই অধীনস্ত শ্রমিকরা।
সম্প্রতি ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা ৪৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে আবারও আলোচনায় আসেন ড. ইউনূস। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে করা হয় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন। এর পরই প্রশ্ন ওঠে মামলার রফা-দফার প্রক্রিয়া নিয়ে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টনে অনিয়মের দায়ে ঢাকার শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার এখন চলমান।