কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের অসহযোগিতায় আলু, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না: কৃষিমন্ত্রী
চাল নিয়ে স্বস্তি থাকলেও সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, "কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা চরমভাবে অসহযোগিতা করছে। আমাদের কর্মকর্তারা তাদের একটু চাপ দিলেই তারা বাজারে আলু সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে।"
রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে দেশে চালের মজুদ ও দর নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, চলতি আমন মওসুমে আরও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে চার লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৪৩ টাকা দরে এক লাখ টন আতপ চাল এবং ৩০ টাকা কেজি দরে দুই লাখ টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হবে। এছাড়া চার লাখ টন গম আমদানি পাইপলাইনে আছে বলে জানান তিনি।
সরকারের ধান-চাল ও গম সংগ্রহ নিয়ে মিটিং হলেও সভায় আলু, পেঁয়াজ ও সবজির উচ্চমূল্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হন কৃষিমন্ত্রী।
বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কথা স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী জানান, "এখনও আলু ও পেঁয়াজের দাম বেশি। এ দু'টি পণ্যের দাম কতোটুকু বেড়েছে, তা নিয়ে বলতে চাই না। আমরা পেঁয়াজের দাম ও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।"
তিনি বলেন, "এবছর আলুর উৎপাদন দুই লাখ টন কম হয়েছে। এই সুযোগ নিচ্ছে কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা। যেখানে ২০ টাকা খরচ হয় না, সেখানে তারা ৫০ টাকা করে ফেলছে।"
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ উৎপাদন করা। আর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই মাসে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চাওয়ার পরও কৃষি মন্ত্রণালয়ে কেন অনুমতি দেয়নি, এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, "আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে দেইনি। কারণ, গতবছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো ছিল, কিন্তু কৃষক দাম পায়নি। আমরা চেয়েছিলাম এবার কৃষক ভালো দাম পাক, যাতে আগামীতেও উৎপাদনে উৎসাহী হয়।"
বাজারে সব ধরণের সবজির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, "অনেক সময় চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই বাড়লেও দাম বাড়ে। এর পেছনের কারণ হলো মূল্যস্ফীতি। জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে। ট্রাক বাড়াও বেড়েছে। ফলে সবজির দামও বেড়েছে।"
এ পর্যায়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সবজির দাম প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। দু'দিন বৃষ্টি হলেই উৎপাদন ও পরিবহন ব্যাহত হয়, বিভিন্ন সবজির দাম বেড়ে যায়। ভারত সহ আন্তর্জাতিক বাজারেও সবজির দাম বেড়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। নতুন ধান-চাল গুদামে রাখার জন্য গুদাম ফাঁকা করা হচ্ছে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আগামী নভেম্বর মাসে যে চাল বিতরণ করতে হবে, তা আগে থেকেই ছাড় করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বোরো মওসুমে চার লাখ টন ধান সংগ্রহের বিপরীতে দুই লাখ টন এবং ১২.৫ লাখ টন চাল সংগ্রহের বিপরীতে ১৪.৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
কৃষক পর্যায়ে চালের দামের তুলনায় সরকার বেশি দামে চাল কেনায় মিলাররা এখন কমদামে চাল কিনে সরকারকে সরবরাহ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নতুন মজুদ আইনের আওতায় ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। এই আইনের আওতায় নীতিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে।
"চাল আমদানির জন্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে কোন ডলার খরচ করতে হবে না। তবে গম আমদানির জন্য আমাদের রিজার্ভে হাত দিতে হবে। গমের একটি জাহাজ বন্দরে আনলোড হচ্ছে। আরও কয়েকটি জাহাজ আসছে", বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চালের মজুদ ১৬.২০ লাখ টন। আর গম রয়েছে ১.৫৩ লাখ টন। প্রতি মাসে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১.৫৩ লাখ টন চাল সরবরাহ করতে হয়। নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম বরাদ্দ দেওয়ায় এখন মজুদ কিছুটা কমে গেছে।