এবার ডাচ বিপ্লবে ধরাশায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা
দুদিন আগেই আফগান শাসন দেখেছে ইংল্যান্ড। ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। এবার শিকার দক্ষিণ আফ্রিকা, শিকারের ভূমিকায় নেদারল্যান্ডস। ডাচ বিপ্লবে দিশেহারা প্রোটিয়ারা অসহায় আত্মসমর্পণ করে মেনে নিলো হার। বিশ্বকাপে স্মরণীয় জয়ের উল্লাসে মাতলো নেদারল্যান্ডস।
মঙ্গলবার ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে আফগানদের পর এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিলো ডাচরা। বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় তাদের। তবে ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্ব আসরে আগেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে প্রোটিয়াদের ১৩ রানে হারায় তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে আগের সাত ম্যাচের ৬টিতে হারে ডাচরা, একটি ম্যাচের ফল আসেনি। এ ছাড়া এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে আগের তিন সাক্ষাতেই হেরেছে তারা। বিশ্বকাপে ২৩ ম্যাচে এটা নেদারল্যান্ডসের তৃতীয় জয়, এবারের আসরে প্রথম। ওয়ানডের বিশ্ব আসরে বড় কোনো দলের বিপক্ষে এই প্রথম জয়ের স্বাদ পেল দলটি। তাদের আগের দুটি জয় নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
বৃষ্টির হানায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে ৪৩ ওভারে নেমে আসে। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা নেদারল্যান্ডস ৮২ রানে ৫ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৪৫ রান তোলে। অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের অসাধারণ ও হার না মানা ইনিংস এবং শেষ দিকে ভ্যান ডার মারউই ও আরিয়ান দত্তের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এই সংগ্রহ পায় তারা। জবাবে ডাচ বোলারদের তোপে ১০০ রানের আগেই ৫ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা ৪২.৫ ওভারে ২০৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে তৃতীয় ম্যাচে হারের স্বাদ নিতে হলো।
৪৩ ওভারে তুলতে হবে ২৪৬ রান, লক্ষ্যটা ছোট ছিল না। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং গভিরতা বলেএই রান পাড়ি দেওয়াটা কঠিন ছিল না তাদের জন্য। কিন্তু দিনটা যে ডাচদের, দলীয় ৩৬ রানে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম আঘাত হানে তারা। কলিন অ্যাকারম্যানের শিকারে পরিণত হয়ে ফিরে যান ২২ বলে ২০ রান করা কুইন্টন ডি কক। উইকেটের সন্ধান পেতেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন ডাচরা। ৩ রান পরই প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ভ্যান ডার মারউইয়ের বলে বোল্ড, ৩১ বলে ১৬ রান করে থামেন তিনি।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর চাপ আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, লোগান ভ্যান বিক, পল ভ্যান মেকেরেনদের তোপের মুখে নিয়মিত ধারায় উইকেট হারাতে থাকে তারা। সাজঘরে ফেরেন এইডেন মার্করাম, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। ডেভিড মিলারের সঙ্গে জুটি বেধে কিছুটা পথ এগোনো হেনরিখ ক্লাসেন দলীয় ৮৯ রানে আউট হন, ২৮ বলে ২৮ রান করেন তিনি। ৮৯ রানেই নেই পাঁচ উইকেট, হারের শঙ্কা তখন জেকে ধরেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এখান থেকে মার্কো ইয়ানসেনকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মিলার।
যদিও ইয়ানসেন বেশি সময় টিকতে পারনেনি, ২০ রানের জুটি করে থামেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। জেরাল্ড কোয়েটজের সঙ্গে নতুন জুটি বাধা মিলার দলীয় ১৪৫ রানে ভ্যান বিকের বলে বোল্ড হন। ৫২ বলে ইনিংস সেরা ৪৩ রান করেন তিনি। এরপর কোয়েটজে ২২ রান করে আউট হলে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে নিয়ে যান স্পিনার কেশব মহারাজ। ৩৭ বলে ৪০ রান করেন তিনি। ডাচদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন ভ্যান বিক। ২টি করে উইকেট পান মেকেরেন, ভ্যান ডার মারউই ও বাস ডে লেডে। একটি উইকেট নেন অ্যাকারম্যান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা নেদারল্যান্ডসের টপ অর্ডারে ধস নামান রাবাদা, কোয়েটজে, ইয়ানসেনরা। ৪০ রানেই তারা ৪ উইকেট হারায়, ৮২ রানে হয় পঞ্চম উইকেটের পতন। এমন দিকহারা দলকে পথ দেখিয়ে বড় সংগ্রহ এনে দিতে কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন ম্যাচসেরা এডওয়ার্ডস। ৬৯ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। ম্যাক্স ও'দাউদ ১৮, অ্যাকারম্যান ১২, সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ১৯, তেজা নিদামানুরু ২০ রান করেন।
তবে ডাচরা ২৪৫ রানে পৌছাঁয় ভ্যাড ডার মারউই ও আরিয়ানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। ১৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন মারউই। তাণ্ডব চালানো আরিয়ান ৯ বলে ৩টি ছক্কায় ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা অতিরিক্ত রানও বেশি খরচা করে। ২১টি ওয়াইডসহ ৩২ রান অতিরিক্ত দেয় তারা। এনগিডি, ইয়ানসেন ও রাবাদা ২টি করে উইকেট পান। একটি করে উইকেট নেন কোয়েটজে ও মহারাজ।