বগুড়ায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, ১৭ মোটরযান ভাঙচুর
বগুড়ায় বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় মহাসড়কে অন্তত ১৭টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় এক শিশুসহ কমপক্ষে ১৩ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে পুলিশ।
আজ রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত হরতাল সমর্থকদের হাতে ভাঙচুর হওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে বগুড়া সদর ইউএনওর যানবাহন ও একটি অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলা গোকুল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশকে সরে যেতে বলেন হরতাল সমর্থকেরা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি। পরে আরও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। সেখানে এক শিশুসহ আহত হন কয়েকজন।
দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশ্যন ব্যাটালিয়ানের লোকজন গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিলেও পরে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে গোকুলে ওই শিশু কীভাবে আহত হলো, জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, "গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে কিনা আমি জানি না। ঊর্ধ্বতন স্যারেরা বলতে পারবেন।"
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, "মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সংঘর্ষে জড়িয়ে যান হরতাল সমর্থকরা। তাদের সরিয়ে দিলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হন। এ সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।"
এদিকে, রোববার সকাল থেকে শহরের ফতেহ আলী বাজার এলাকার গালাপট্টি সড়কে জেলা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এর আগে, সকাল সাড়ে আটটার দিকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিক রিগ্যানের নেতৃত্বে একটি মিছিল সাতমাথার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধায় আবার তা নবাববাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসে। এরপর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান নেন।
পরে সকাল পৌনে দশটার দিকে আওয়ামী লীগের একটি দল গালাপট্টি সড়ক হয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের দিকে আগানোর চেষ্টা করলে এ সময় দু পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া, ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে। এতে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ একাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, "হরতালকে কেন্দ্র করে শহরের কয়েকটি স্থানে দফায় দফায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে উত্তপ্ত পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচ রাউন্ড বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে; বর্তমানে সব ঠিক আছে। আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।"
এদিকে, হরতালে রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করলেও অফিস আদালতে যাওয়া মানুষেরা পরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন।